জুনে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হচ্ছে ই-গেট
উদ্বোধনের প্রায় ১১ মাসেও চালু হয়নি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট কার্যক্রম। তবে, আগামী জুনের মধ্যে ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীরা আধুনিক এ সেবা পাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
২০২১ সালের ৩০ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তখন বলা হয়েছিল—এত দিন ইমিগ্রেশন পুলিশ ম্যানুয়ালি যে কাজ করতো, সেটি এখন ই-গেটের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
কিন্তু, উদ্বোধনের প্রায় এক বছরেও এত দিন ই-গেট ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। তাই ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীরা কোনো সুফল পাচ্ছিল না। অবশেষে আগামী জুন মাসের মধ্যেই ই-গেট চালু হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ) আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে ই-গেট ব্যবহার করা যাবে জুন মাসের মধ্যে। এ বিষয়ে আমাদের কাজ প্রায় শেষ দিকে।’
আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী জানান, অন্যান্য উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীদের জন্য ই-গেট চালু হতে যাচ্ছে। ই-গেট চালু হলে ইমিগ্রেশনে যাত্রী খুব সহজে কম সময়ে ইমিগ্রেশন কাজ শেষ করতে পারবেন।
কিন্তু, ই-গেট ব্যবহার বা চালু করতে এত সময় লাগছে কেন, জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেখুন ই-পাসপোর্টের সব তথ্য ই-গেটে সফটওয়্যারে অটোমেটিক সব ডেটা দেখাবে। সেজন্য এ কাজটি যে কোম্পানি করছে, একটু সময় লাগছে। এখন কাজ শেষ পর্যায়ে। আমরা আগামী জুন মাসের মধ্য চালু করতে পারব।’
ই-গেটের সুবিধা নিয়ে আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘ই-গেট চালু হলে যাত্রী নিজে নিজেই ইমিগ্রেশন করতে পারবে, কোনো ধরনের হয়রানি হবে না, সময় বাঁচবে, দ্রুত সময়ে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারবে।’
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ছাড়াও পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বর্ডারে ই-গেট চালু করা হবে। অন্যান্য বর্ডারের ই-গেট চালু বিষয়ে আমরা অনেক দূর কাজ এগিয়ে ফেলছি। ঢাকায় চালুর পর বাকি সবগুলো বর্ডারেও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই স্থাপন ও চালু করা হবে।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে ই-গেট স্থাপন করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ভিআইপি)। ই- গেট থাকলেও ই-গেটের সক্ষমতা এখনও চালু করতে পারেনি বলে ই-পাসপোর্টধারীদের ইমিগ্রেশন হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। তাতে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টধারীদের লম্বা লাইন হয়। সময় বেশি লাগে এবং যাত্রী হয়রানির অভিযোগও পাওয়া যায়।
ই-গেটের সঙ্গে পাসপোর্ট সার্ভারের সংযোগ এখনও তৈরি করতে না পারায় ইমিগ্রেশন পুলিশ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আগের মতো ইমিগ্রেশন করছে। ই-গেট চালু হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসপোর্টধারীকে শনাক্ত করা যাবে।
স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, ই-পাসপোর্টে মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ও অ্যান্টেনা বসানো হয়েছে। যার ফলে ই-পাসপোর্টধারী
ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য পাসপোর্টের মুদ্রিত ও চিপের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে। ই-গেট পাসপোর্ট স্ক্যান করার পর ই-গেটের সঙ্গে সংযুক্ত ক্যামেরা যাত্রীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন জানায়, কারিগরি কিছু জটিলতা এখনও দূর হয়নি। এ কারণেই ই-গেট ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তারা এটি সমাধান করলে ই-গেট ব্যবহার সম্ভব হবে।
গত ২০১৮ সালে ২১ জুন ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রকল্প অনুমোদন পায়। সে বছরেই ১৯ জুলাই জার্মানির ডেরিভোস জিএমবিএইচ-এর সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চুক্তি হয়। এ সংস্থার মাধ্যমেই ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট স্থাপন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উদ্বোধন করেন ।
২০২১ সালের ৩০ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে ই-গেট উদ্বোধনের পর ক্রমান্বয়ে দেশের সব বর্ডারে ই-গেট চালু করার কথা বলা হয়।