টাকার জন্য নিজের ছেলেকে লুকিয়ে রেখে 'অপহরণ' নাটক
শরীয়তপুরে নিজের ছেলেকে মামাতো বোনের বাসায় লুকিয়ে রেখে 'অপহরণ' নাটক সাজানোয় মোক্তার হোসেন (৩৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান এ তথ্য জানান।
অভিযুক্ত মোক্তার হোসেনের বাড়ি জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের আবদুল বেপারীকান্দি গ্রামে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, মোক্তার হোসেন খান নিজের ছেলে নাঈমকে (৯) ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের তাঁর খালাতো বোনের বাসায় রেখে অপহরণ নাটক তৈরি করার চেষ্টা করেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোক্তার জানান, গত ২৯ জুন সোমবার সকাল ৮টার দিকে তিনি কাজীরহাট হয়ে রূপবাবুর হাটে যান। দুপুর ১২টার দিকে রূপবাবুর হাটে একটি চায়ের দোকানে চা পান করার সময় তাঁর ছেলে নাঈম প্রস্রাব করার কথা বলে বিপরীত দিকে রাস্তার ঢালে যায়। এ সময় হঠাৎ করে চায়ের দোকানের সামনের রাস্তায় জাজিরার দিক থেকে দুটি মাইক্রোবাস ও কাজীরহাট থেকে আসা একটি বাসের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এর পর যানজট সরে গেলে তিনি তাঁর ছেলেকে আর খুঁজে পাননি।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে ছেলেকে না পেয়ে কান্নাকাটি করে দুপুর আড়াইটার দিকে বাড়ি ফিরে এসে আত্মীয়স্বজনকে এ ঘটনা জানান মোক্তার। এর মধ্যে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চেয়ে তাঁকে ফোন করে বলে জানান। বিষয়টি তাঁর ভায়রা ভাই রুবেল বেপারী জাজিরা থানায় এসে জানান। পুলিশ সুপার বিষয়টি জেনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ আল মামুন শিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তানভীর হায়দার শাওন, ডিআইও-২ সাইফুল আলম ও ডিবি পুলিশের একটি দল জাজিরা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কথিত অপহৃত নাঈমের অবস্থান নিশ্চিত হয়।
পরে পুলিশের মাধ্যমে ডিআইও-২ সাইফুল আলমের নেতৃত্বে জাজিরা থানা পুলিশের একটি দল ওই বাসা থেকে নাঈমকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পনাকারী মোক্তার হোসেন বলেন, 'আমি অর্থনৈতিকভাবে দারুণ সমস্যায় আছি। সংসারের অভাব-অনটন ও ধারদেনা থাকায় সচ্ছল আত্মীয়স্বজন থেকে ছেলের মুক্তিপণের নামে কৌশলে টাকা নেওয়ার জন্য এ নাটক করি। আমার বন্ধু সাব্বিরের (৩৫) সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলেকে নিয়ে মাওয়া ঘাট পার করে খালাতো বোনের বাসায় কেরানীগঞ্জে রেখে আসি।'
পুলিশ সুপার আরো বলেন, 'এটি একটি সাজানো ঘটনা। এই পরিকল্পিত মিথ্যা অপহরণ ও গুমের ঘটনার কারণে মোক্তার হোসেন যেমন টাকাপয়সা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন, তেমনিভাবে সমাজে আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি হতো। বিধায় পরিকল্পনাকারী মোক্তারের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।'
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ আল মামুন শিকদার, জাজিরা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম সরকার, ডিআইও-১ আজহারুল ইসলামসহ অভিযানে নেতৃত্বদানকারী পুলিশ কর্মকর্তারা।