‘টিকটক হৃদয়’ মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য : পুলিশ
বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী শহর বেঙ্গালুরুতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই চক্রটি বিস্তৃত।
আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিসি মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘তরুণীর নির্যাতনের ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য।’
ওই তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারের এ খবর জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশও। এ ঘটনায় দুই দেশেই মামলা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য দেন।
ভারতে গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে চারজন হলেন- সাগর, মোহাম্মদ বাবা শেখ, হৃদয় বাবু ও হাকিল। গ্রেপ্তার নারীর নাম জানানো হয়নি।
বিভিন্ন সময় এই চক্রের সদস্যরা বেশ কয়েকজন নারীকে পাচার করেছে বলে দাবি করছে ডিসি মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘হৃদয় বাবুসহ চক্রের সবার বয়স ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধী মিলে সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রটি গড়ে তুলেছে। চক্রটির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশে বিস্তৃত। স্কুল-কলেজপড়ুয়া বখে যাওয়া তরুণী থেকে গৃহিনী পর্যন্ত সবাই এ চক্রের টার্গেট।’
মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ভাইরাল ভিডিওটির ঘটনায় জড়িত সব বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছে পুলিশ। টিকটক হৃদয়সহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সহায়তায় অবৈধভাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। মূলত টিকটক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা একটি ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়। গ্রুপটির মূল পৃষ্টপোষক মূলত আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রটি। এই গ্রুপের অ্যাডমিনের তত্ত্বাবধানে গত বছরের শেষের দিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলার একটি রিসোর্টে ৭০০ থেকে ৮০০ জন তরুণ-তরুণী পুল পার্টিতে অংশ নেয়। ওই পার্টির অন্যতম সমন্বয়কারী ছিল রিফাতুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই গ্রুপে সুনির্দিষ্ট কিছু সদস্য আছে, যারা গ্রুপের নারী সদস্যদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে পাচার করে। এই চক্রের মূল আস্তানা ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়। মূলত যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন বয়সের মেয়েদেরকে ভারতে পাচার করা হয়। চক্রটি ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। যে হোটেলগুলোতে চাহিদামাফিক বিভিন্ন বয়সের মেয়েদেরকে পাঠানোর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।’
তরুণীকে নির্যাতনের এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা ডিএমপির হাতিরঝিল থানায় মানব পাচারকারী আইন ও পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টে একটি মামলা করেছেন। এ বিষয়ে মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’
গত কয়েক দিন ধরে ভারতের কর্নাটক রাজ্যে বাংলাদেশি ওই তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভাইরাল ভিডিওটি ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগেরও নজরে আসে বলেও জানান ডিসি মো. শহিদুল্লাহ।
পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, ভিডিওতে দেখা যায়, আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে তিন-চারজন যুবক অমানুষিকভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ধারণ করা ভিডিওটির একজন নির্যাতনকারীর সঙ্গে রাজধানীর মগবাজার এলাকার একটি ছেলের ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ছবির সঙ্গে মিলে যায়। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের তদন্তে দেখা যায়, যুবকের নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয়। হৃদয়ের পরিচয় তার মা ও মামার কাছ থেকেও শনাক্ত করা হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে ‘টিকটক হৃদয়’ নামে চেনে। এ ছাড়া তরুণীর বাবা-মাকে খুঁজে বের করে পুলিশ। মেয়েটির বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তাদের মেয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় থাকত।’