ঢাকা ওয়াসার দুর্নীতি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই : টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ঢাকা ওয়াসায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির যে সকল অভিযোগ উঠে এসেছে, তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন ও বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ খোদ বোর্ড চেয়ারম্যান কর্তৃক উত্থাপিত হওয়ায়, অভিযোগসমূহকে এড়িয়ে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই ।
আজ শনিবার (২০ মে) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক এ কথা বলেন।
টিআইবি পরিচালক বলেন, ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে ও গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে সংস্থাটিকে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করার পাশাপাশি ওয়াসা বোর্ডকে অকার্যকর রাখার অভিযোগ এনেছেন। যা দীর্ঘসময় ধরে সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন ও সুনির্দিষ্ট গবেষণার মাধ্যমে জনসমক্ষে উঠে আসছে।
পুরো বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিহীনতার প্রকট উদাহরণ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে ধারাবাহিকখভাবে উত্থাপিত হলেও প্রতিকারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। অদৃশ্য শক্তির প্রভাব বলয়ে এই স্বেচ্ছাচারিতাকে জবাবদিহিহীনতার ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে । দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখন ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন এবং লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। ঢাকা ওয়াসাকে ঘিরে দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগসমূহ আর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, “ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বোর্ডকে অকার্যকর করা ও ওয়াসাকে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত করার যে অভিযোগ খোদ বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছ থেকেই এখন জানা যাচ্ছে, তা ২০১৯ সালে টিআইবি প্রকাশিত ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফলের-ই প্রতিফলন। ওয়াসায় দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ফলে জনগণকে প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারিতার ক্রমবর্ধমান মাশুল গুনতে হচ্ছে, তার প্রতিও টিআইবি তার গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণ অনুযায়ী বিভিন্নভাবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বলা বাহুল্য, অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ওয়াসার গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না, অথচ ক্রমবর্ধমান চড়া দামে সরবরাহ করা নিম্নমানের পানি ফুটানোর অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। যার প্রতিকারের অন্যতম বাস্তবসম্মত উপায় ওয়াসার ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ। এর মধ্যে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা নেই, যা হতাশাজনক।”
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণাকে অর্থবহ করতে ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট সকল যোগসাজসকারীর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের আহবান জানাচ্ছে টিআইবি।