নটর ডেম কলেজছাত্র নাঈম হাসানের লাশ দাফন
রাজধানী গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িচাপায় নিহত নটর ডেম কলেজছাত্র নাঈম হাসানের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব কাজীরখিল এলাকায় গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজার পর তার লাশ দাফন করা হয়।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জজ হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়েই পরপারে চলে গেল পরিবারের ছোট ছেলেটি। নাঈম হাসান প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে প্রথমে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়। পরে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হয়। সে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিল। তার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে জজ হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনা করবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে পরিবার ও এলাকার নাম দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু তা আর হলো না। অদক্ষ চালকের গাড়িচাপায় সেই স্বপ্ন মাটিচাপা পড়ল।
নাঈম হাসানের মামা কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ফারুক আহমেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের সমতুল্য ছিল নাঈম। খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। জজ হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন নিয়ে সে পড়ালেখা করছিল। কিন্তু ময়লা পরিষ্কারক লাইসেন্সহীন গাড়িচালক আমার ভাগ্নেকে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
নাঈম হাসানের বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমার ছেলে তো এখন আর নেই। তার স্বপ্নগুলো কে বাস্তবায়ন করবে? তার স্বপ্নই এখন আমার সম্বল। আমি পল্টন থানায় মামলা করেছি। আমি ওই গাড়িচালকের উপযুক্ত বিচার চাই।’
নাঈমের জ্যেঠা আবদুল আউয়াল দেওয়ান বলেন, ‘আমার ভাতিজা খুব ভালো ছাত্র ছিল। যারা তাকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই। অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দুর্ঘটনার নামে এসব হত্যাকাণ্ড রোধ করার দাবি জানাই।’
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার দুপুরে গুলিস্তানে রাস্তা পার হওয়ার সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম গুরুতর আহত হয়। পরে পথচারীরা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবার জানায়, নাঈমের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। তিনি রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় বইয়ের ব্যবসা করেন। ব্যবসা ও দুই ছেলের পড়ালেখার জন্য রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের জাওলাহাটি এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকতেন তারা। সেখানে তার প্রথম জানাজা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পরিবারের লোকজন জানায়, ঘটনার সময় নাঈম বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশে যাচ্ছিল। গুলিস্তান হল মার্কেট মোড়ে বায়তুল মোকাররম গেটগামী সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি নাঈমকে প্রথম ধাক্কা দেয়। পরে চাপা দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হয়। হাসপাতালে নিতে নিতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর শুনেই তার বাবা শাহ আলম হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।