নিখোঁজদের সন্ধান পেতে ভিড় বাড়ছে চট্টগ্রাম মেডিকেলে
সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পর খোঁজ মিলছে না অনেকের। প্রিয় মানুষের সন্ধান পেতে তাই এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন স্বজনেরা। মৃত্যু হলে অন্তত প্রিয় স্বজনের মরদেহ যেন খুঁজে পান, সেজন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে স্বজনদের। সেখানে নমুনা দিচ্ছেন তাঁরা। এরই মধ্যে স্বজনদের কাছে মরদেহ তুলে দিতে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশ।
ছয় মাস বয়সি ফাইজা বাবার খোঁজে মায়ের সঙ্গে চট্টগ্রামে এসেছে। তার বাবা সোবাহান ডিপোর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ তিনি। এ ছাড়া সুমন ও শাহানা তাদের বাবার খোঁজ নিতে স্বজনদের সঙ্গে যাচ্ছে নানা প্রান্তে। শতাধিক আহত মানুষের সঙ্গে বাবার চেহারার মিল পাচ্ছে না তারা। এরপরও পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া একটি লাশ নিজেদের দাবি করলেও এ লাশের দাবিদার আরেকজন। তাই ডিএনএ নমুনা ছাড়া লাশ দেওয়া সম্ভব নয়। লাশ শনাক্তে নমুনা দিতে সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন পড়েছে জরুরি বিভাগের সামনে।
পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ৪১টি মরদেহ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২টি শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৮টি মরদেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করতে কাজ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি জানায়, নিখোঁজ স্বজনদের অন্তত দুজনের রক্ত বা লালা নিয়ে রেফারেন্স স্যাম্পল সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর অজ্ঞাতনামা লাশ থেকে নেওয়া ডিএনএ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে স্বজনদের হাতে লাশ তুলে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘আমরা সিআইডির বিশেষজ্ঞদল দিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করছি। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরে পরিচয় শনাক্ত হবে। সাধারণত ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট অনেক সময় এক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে’
সেক্ষেত্রে মর্গে থাকা লাশের কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা আপাতত স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করছি। লাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। লাশ ফ্রিজেও রাখা হতে পারে।’
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে জেলা পুলিশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম দেখতে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ডিআইজি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ৪১টি লাশ রিসিভ করা হয়েছিল। তার মধ্যে পরিচয় শনাক্ত হওয়া ২২ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের পরে বাকি মরদেহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
গত শনিবার রাতে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন রয়েছেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১২ জনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন।