নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় ছাড়লেন রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ৭৮৭ দিন পর বিএনপির নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় ছেড়েছেন। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন রুহুল কবির রিজভী। এখন থেকে দলীয় প্রয়োজনে যতটুকু সময় দরকার, ততটুকু সময় কার্যালয়ে থাকবেন তিনি।
যে সময় রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনের কার্যালয়ে অবস্থান নেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সদ্য কারামুক্ত খালেদা জিয়ার মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সে সময় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। সেদিন আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিলে ওইদিনই পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়।
এর আগে সে বছরই ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হোটেল লা-মেরিডিয়ানে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন খালেদা জিয়া। এরপর একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে শঙ্কা তৈরি হয়।
সে আশঙ্কা থেকেই রুহুল কবির রিজভী সিদ্ধান্ত নেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান নেবেন। একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ছোট একটি কক্ষে অবস্থান করে আসছিলেন রিজভী। সেখানে নিয়মিত দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য যাতায়াত করতেন।
দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমে বক্তব্য রেখে আসছিলেন রুহুল কবির রিজভী। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে মিছিলের নেতৃত্বও দিয়েছেন।
অবশেষে সরকারের নির্বাহী আদেশে গতকাল বুধবার (২৫ মার্চ) ছয় মাসের জন্য কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপরই রিজভী সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আর দলীয় কার্যালয়ে রাত্রিযাপন করবেন না। সে অনুযায়ী, আজ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয় ছেড়ে রাজধানীর ভাড়া বাসায় যান রুহুল কবির রিজভী। দলীয় কার্যালয় ছেড়ে যাওয়ার সময় কার্যালয়ের কর্মকর্তা কমচারীরা তাঁকে বিদায় জানান। তাঁরা রুহুল কবির রিজভীর জন্য দোয়া করেন এবং শুভকামনা জানান।
দলীয় কার্যালয় থেকে চলে যাওয়ার সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যত দিন পর্যন্ত অবৈধ সরকারের কারাগার হতে মুক্ত না হন, তত দিন পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়েই থাকব। কষ্ট করে থেকেছি। এ সময়ের মধ্যে আমি দলের হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থেকেছি। দেশনেত্রী কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় আমি চেষ্টা করেছি নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে। তাঁরা দলীয় কার্যালয়ে এসে যেন বিমুখ হয়ে চলে না যান।