পদ্মা সেতু ঘিরে জাজিরায় পর্যটনের হাতছানি
স্বপ্নের পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে আগামী রোববার। তার আগেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসবে বলে অপেক্ষায় রয়েছে মানুষ। উদ্বোধনের পর থেকে সব সময়ই পর্যটকরা বহুল আলোচিত এই সেতুটি দেখতে আসবেন বলে মনে করছেন জাজিরা প্রান্তের মানুষ। তাঁরা মনে করছেন, শুধু দেশের মানুষই নয়, বিদেশি পর্যটকরাও আসবেন এই এলাকায়। ফলে, শরীয়তপুরে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে পদ্মা সেতুকে ঘিরে।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্বপ্নের এই সেতু চালুর আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নয়নের প্রতীক দৃষ্টিনন্দন এই সেতু দেখার জন্য প্রতিদিন আসছে হাজার হাজার মানুষ। এরই মধ্যে পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মাপাড়। অনেক স্থানেই গড়ে উঠেছে রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মোটেলসহ বিলাসবহুল বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
বেসরকারিভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনেক উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে জাজিরায় জমি কিনে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা সেতুর ল্যান্ডিং পয়েন্ট জাজিরার নাওডোবায় শেখ হাসিনা তাঁতপল্লির কাজও চলমান রয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিামাঞ্চলের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু চালু হলে শুধু যোগাযোগই নয়, পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও অনেক দূর এগিয়ে যাবে শরীয়তপুরের মানুষ।
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যতম পছন্দের স্থান হবে পদ্মা সেতু এলাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ভরে যাবে জাজিরার পদ্মাপাড়।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করে, পদ্মা সেতুর জাজিরা এলাকায় একটি বিসিক শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হলে দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগক্তারা বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলতে আরও আগ্রহী হবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী হবে শরীয়তপুর জেলাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে শ্রমজীবী মানুষের। সবক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা পদ্মাপারের মানুষের।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের অবহেলিত এবং তিন দিক থেকে নদীবেষ্টিত আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকা জেলার নাম ছিল শরীয়তপুর। মাদারীপুর মহাকুমা থেকে ১৯৮৪ সালে ফরায়েজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাজি শরীয়তুল্লার নামানুসারে তৎকালীন সরকার শরীয়তপুরকে জেলা ঘোষণা করে। জেলা ঘোষণার দীর্ঘ ৪২ বছরেও শিক্ষা চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় পাশের জেলাগুলোর তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে এই জেলা। বলা যেতে পারে, অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোঁয়া বঞ্চিত শরীয়তপুর। কিন্তু, আনন্দের বিষয় হলো, পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর পর থেকেই জেলাটির দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে শুরু করে। এক সময়ের অবহেলিত এই জেলায় এখন নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে।
জেলার নড়িয়া উপজেলার পদ্মার দক্ষিণ তীর রক্ষাবাঁধ এলাকা থেকে শুরু করে মাদারীপুরের শিবচর পর্যন্ত দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় উদ্যোক্তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে জমি কিনে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ফলকের সাইন বোর্ড টানিয়েছেন।
উদ্যোক্তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর পর্যটনশিল্প ও বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠলে শরীয়তপুরসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ সুগম হবে। তৈরি হবে লাখ লাখ মানুষের কর্ম সংস্থানের।
গোসাইরহাটে কুচাপট্টি থেকে সেতু দেখতে আসা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আর মাত্র একদিন পর পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আমরা যাতায়াত করতে পারব, এটা ভাবতেই বুকটা ভরে যায়। এ জন্য উদ্বোধনের আগে পরিবারের লোকজন নিয়ে দেখতে এসেছি। আমাদের মতো অনেকে পরিবার নিয়ে আসছে পদ্মা সেতু দেখার জন্য। তাই এখানে থাকার ব্যবস্থাটা যদি ভালো হয়, আশা করি সামনে এটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।’
নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরেই শরীয়তপুরে শুরু হবে উন্নয়ন কার্যক্রম। পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে এখানে তৈরি হবে থ্রি স্টার মানের হোটেল-মোটেল। এ ছাড়া গড়ে উঠবে রিসোর্ট গার্মেন্টস, মাঝারি শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এতে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে শরীয়তপুর জেলা।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, ‘পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুরে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু দিয়েছেন। একই সঙ্গে চাঁদপুরের সঙ্গে কানেকটিংয়ের জন্য মেঘনা সেতুরও সমীক্ষা চলছে। ওই সেতুটিও যদি হয়ে যায়, তাহলে চিটাগং, সাতক্ষীরা মোংলা, ভোমরা ও বেনাপোল বন্দরের কানেকটিভিটি হবে শরীয়তপুরের ওপর দিয়ে। সরকারি উদ্যোগে আমরা ইপিজেড তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছি। এই কারণে অনেক বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি এখানে পর্যটন শিল্পেরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শরীয়তপুর জেলা বাংলাদেশের উন্নত জনপদ হিসেবে বিবেচিত হবে।’