পরী মণির জামিন শুনানিতে যা হলো
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় চিত্রনায়িকা পরী মণির জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।
পরী মণির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মজিবুর রহমান ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু। আজ দুপুর ২টায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পরী মণির জামিন শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতে বিচারক পরী মণির আইনজীবী মজিবুর রহমানকে বলেন, আসামি (পরী মণি) গ্রেপ্তার কবে হয়েছে? আসামির কাছ থেকে কী উদ্ধার হয়েছে? মামলায় চার্জশিট এসেছে কিনা?
এরপরে আইনজীবী মজিবুর রহমান বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, মাননীয় আদালত, পরী মণিকে গত ৪ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে ১৯ লিটার বিদেশি মদ, চার গ্রাম আইস ও এক স্লট এলএসডি পাওয়া গেছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।
এরপরে বিচারক আইনজীবীকে আবার প্রশ্ন করেন, পরী মণিকে কি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে?
তখন রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মাননীয় আদালত, র্যাব গ্রেপ্তার করেছে।
এরপরে বিচারক পরী মণির আইনজীবীকে বলেন, আপনার আর কিছু বক্তব্য থাকলে শুনানিতে বলেন।
তখন মজিবুর রহমান বলেন, মাননীয় আদালত পরী মণি ভার্টিকো ও অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত। তিনি কারাগারে থাকার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
আইনজীবী মজিবুর বলেন, পরী মণিকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে ২৬ দিন জেলহাজতে আটক রয়েছেন। তাঁর বডি থেকে কোনো মাদক উদ্ধার করা হয়নি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৭ ধারা অনুসারে পরী মণি জামিন পেতে পারেন। পরী মণির বিরুদ্ধে যেসব অপরাধ আনা হয়েছে তার সাজা মাত্র পাঁচ বছর। এ ছাড়া এ মামলায় পুলিশ তদন্তে যদি অভিযোগের প্রমাণ পায় তাহলে মামলার বিচার হবে সিএমএম আদালতে। আর পরী মণি জামিন পেলে তদন্তে কোনো বিঘ্ন ঘটাবে না। তিনি পালিয়েও যাবেন না। নিয়মিত আদালতে হাজির থাকলে, তাই পরী মণির জামিন চাচ্ছি।
আইনজীবী মজিবুর আরও বলেন, মাননীয় আদালত, পরী মণি দেশের জন্য প্রীতিলতা একটা ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এটা সরকারি অনুদানের। ইতোমধ্যে এটার শুটিং টাইম চলে গেছে। এখন জামিন না পেলে প্রডিউসার খুব আর্থিকভাবে বিপদে পড়বেন। এ ছাড়া পরী মণিকে গ্রেপ্তারের পরে ২৪ ঘণ্টা বিনা কারণে আটকে রাখা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশক্রমে ছয় দিন রিমান্ড খেটেছেন। রিমান্ডে পুলিশ কোনো তথ্য উৎঘাটন করতে পারে নাই। তাই পরী মণির জামিন পাওয়া আবশ্যক।
এরপরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু শুনানিতে বলেন, মাননীয় আদালত, পরী মণির কাছ থেকে ভয়ংকর মাদক আইস ও এলএসডি পাওয়া গেছে। এগুলো সমাজের জন্য খুব ক্ষতিকর। এ ছাড়া পরী মণি কৌশলে ফেসবুকে লাইভ করে মদের বোতল ফেলে দিয়ে খালি বোতল সাজিয়ে রাখেন। তাই পরী মণির জামিন নাকচ করা হোক।
এরপরে শুনানি শেষে বিচারক ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশের অভিযোগপত্র দাখিল পর্যন্ত জামিনের আদেশ দেন।
এদিকে পরী মণির আইনজীবী মজিবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, দেশে আইন আছে, আইনের শাসন আছে এবং আদালত আছে। আমাদের আদালতের ওপর আস্থা রাখতে হবে। এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে আইস ও এলএসডি রাখারও অভিযোগ ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, পরী মণির জামিন পাওয়া একটা অধিকার। তবে আমরা জামিনের বিরোধিতা করেছি। আদালত যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই আদেশ দিয়েছেন। এতে আমাদের কিছু করার নাই।
গত ৪ আগস্ট রাতে প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরী মণি ও তাঁর সহযোগী দীপুকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় পরী মণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট র্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরী মণি ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে।
এই মামলায় তিন দফায় রিমান্ড শেষে গত ২১ আগস্ট আদালতের নির্দেশে পরী মণিকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন গত ২২ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে পরী মণির জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান। পরে আদালত জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
১৩ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির দিন ধার্য করার আদালতের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে গত বুধবার হাইকোর্টে আবেদন করেন পরী মণি। পরদিন বৃহস্পতিবার পরী মণির নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন অবিলম্বে শুনানি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত জামিন শুনানির যে দিন নির্ধারণ করেছিলেন, তা কেন বাতিল করা হবে না মর্মে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।