পাপিয়াকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য নয় : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে বিভ্রান্তিকর, সম্মানহানিকর ও অসত্য সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
সন্ধ্যায় শরীফ মাহমুদ অপু এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে গণমাধ্যমে যেসব তথ্য এসেছে তা সত্য নয়। অসত্য তথ্য ছড়িয়ে তাদের সম্মানহানী করাটাও এক ধরনের অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।’
গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে নয়াদিল্লি যাওয়ার সময় বহির্গমন গেট থেকে পাপিয়া (২৮), তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান (৩৮), মফিজুরের ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবাকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাদের বিরুদ্ধে জাল টাকা, অস্ত্র ও মাদকের মামলা হয়। এসব মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডও মঞ্জুর করেন আদালত। তবে এর মধ্যেই রাজনীতিবিদ, আমলাসহ সমাজের বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাপিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়। যদিও এসব নামের সত্যাসত্য কেউ নিরূপণ করেনি।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি এলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ, স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ও উৎস উল্লেখ করে বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক, অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও সম্মানহানিকর সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। যা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে এবং এতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।’
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম জড়িয়ে অযথা সম্মানহানিকর, বিভ্রান্তিকর ও অসত্য সংবাদ প্রচার করা আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ও উৎস উল্লেখ করে বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে সম্মানহানিকর, বিভ্রান্তিকর ও অসত্য সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
কে এই পাপিয়া
নরসিংদী জেলা শহরের ভাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকার বাসিন্দা পেট্রোবাংলার অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সাইফুল বারীর মেয়ে পাপিয়া। ২০০৯ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। এরপর ২০১২ সালে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে স্নাতক শেষ করতে পারেননি তিনি।
পাপিয়ার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে নানা ধরনের কথা শোনা যায় সেই সময়ের ছাত্রনেতাদের কাছে। কারো বক্তব্য, পাপিয়া ছাত্র রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। আবার কারো বক্তব্য, কলেজজীবন থেকেই পাপিয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
যুব মহিলা লীগে পদ পাওয়ার আগেই পাপিয়া বিয়ে করেন নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনকে। পাপিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়ে তিনিও এখন পুলিশ রিমান্ডে আছেন।
পাপিয়াকে নিয়ে র্যাবের বক্তব্য
পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের দিন সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, হোটেল ওয়েস্টিনের ২১তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষটি গত নভেম্বরে ভাড়া নেন পাপিয়া। তিনি গত তিন মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। ১৯তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি তিনি পুরোটাই বুক করে নিতেন। সেখানে প্রতিদিন তিনি আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায়, গত তিন মাসে তিনি প্রায় তিন কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষকে।