পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সিন্ডিকেটে ১৫ জন

দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়তে অভিযান চালিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সময় একজন আড়তদারকে জরিমানা এবং অন্যদের সতর্ক করে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল আজ সোমবার সকাল থেকে পেঁয়াজের আড়তগুলোতে অভিযান চালায়।
প্রতিনিধিদল লক্ষ করে কিছু ব্যবসায়ী ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ এনে বিক্রি করছে ১২০ টাকায়। কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে টেকনাফভিত্তিক একটি সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে তাদের নামের তালিকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযান চলাকালে অস্বাভাবিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি ছাড়াও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় গ্রামীণ বাণিজ্যালয় নামের এক আড়তদারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এবং অন্য পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের পাইকারি ৬০ ও খুচরা ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে নির্দেশ দেয় প্রতিনিধিদল।
আজ দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপসচিব সেলিম হোসেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও রিয়াজুদ্দিন বাজার পরিদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামের কারসাজিতে যুক্ত ১২ থেকে ১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট।
এই সিন্ডিকেটে যুক্ত আছে টেকনাফ বন্দর, টেকনাফ উপজেলা, কক্সবাজার সদর এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জভিত্তিক পেঁয়াজ আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ, আড়তদার ও বিক্রেতা। তাদের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
১. সজিব (আমদানিকারক) টেকনাফ, কক্সবাজার।
২. মম (মগ) (আমদানিকারক) টেকনাফ, কক্সবাজার।
৩. ফোরকান (পেঁয়াজ বিক্রেতা) টেকনাফ, কক্সবাজার।
৪. জহির (আমদানিকারক) টেকনাফ, কক্সবাজার।
৫. সাদ্দাম (আমদানিকারক) টেকনাফ, কক্সবাজার।
৬. কাদের (সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট) টেকনাফ স্থলবন্দর, কক্সবাজার।
৭. শফি (পেঁয়াজ দালাল) টেকনাফ, কক্সবাজার।
৮. গফুর (বিক্রেতা) টেকনাফ, কক্সবাজার।
৯. মিন্টু ( বিক্রেতা) টেকনাফ, কক্সবাজার।
১০. খালেক (বিক্রেতা) টেকনাফ, কক্সবাজার।
১১. টিপু (বিক্রেতা) টেকনাফ, কক্সবাজার।
১২. মেসার্স আজমীর ভাণ্ডার, ১০৯, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম।
১৩. মেসার্স সৌরভ এন্টারপ্রাইজ, নূপুর মার্কেট, চট্টগ্রাম।
১৪. এ হোসেন ব্রাদার্স, ঘোষাল কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম।
১৪. মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজ, টেকনাফ, কক্সবাজার।
১৫. মেসার্স আল্লাহর দান স্টোর, খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম।
ওই পেঁয়াজ আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামস্থ কমিশন এজেন্ট এবং আড়তদারদের যোগসাজশে মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজ পাইকারি বাজার পর্যায়ে ৯০ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য করছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে এসব সিন্ডিকেটের তথ্য দেয় খাতুনগঞ্জস্থ ব্যবসায়ী সূত্র।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ ভিত্তিক ওই সিন্ডিকেট ভাঙতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
অভিযান শেষে মিয়ানমার থেকে আনা পেঁয়াজের আমদানি মূল্য পড়ে কেজিপ্রতি ৪২ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন, শ্রমিক, মুনাফা ও বিবিধ খরচ ধরে প্রতিকেজি পেঁয়াজের পাইকারি দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা দেন।
আজকের অভিযানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী, র্যাব-৭, এপিবিএন, সিএমপি সদস্যরা, বাজার পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।