প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শ্যালককে খুন
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের লহরজপুর গ্রামে কামাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়েই পরিকল্পিতভাবে আপন শ্যালক কামাল উদ্দিনকে হত্যা করে দুলাভাই মাখন মিয়া।
এ ব্যাপারে নিহত কামাল উদ্দিনের বোন ও হত্যার পরিকল্পনাকারী মাখনের স্ত্রী প্রতিপক্ষ ২৭ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় ঘটনার তিন দিন পর একটি হত্যা মামলা করেন।
এদিকে ঘটনার পরপরই নিহতের ভগ্নিপতি মাখন, ফারুক, শরীফ, লেবুসহ তাঁর স্বজনরা গা-ঢাকা দেন। মামলার বিষয়ে কোনো সহযোগিতা না করায় পুলিশের সন্দেহ হয়। এ ঘটনায় গত ৭ জানুযারি সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার গুচ্ছগ্রাম থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফারুক মিয়াকে আটক করে পুলিশ।
আটককৃত ফারুক মিয়া গত ৮ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নবীগঞ্জ থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানান বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী।
পারভেজ আলম বলেন, ‘বিগত ৬ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলার উজিরপুর এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন ফজল মিয়া। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ মাখন মিয়াসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ১০ নভেম্বর বানিয়াচং থানায় একটি হত্যা মামলা নিহতের পরিবার। আসামিপক্ষের লোকজন বিজ্ঞ আদালতে ফজল মিয়া হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে বেকায়দায় পড়ে যান মাখন মিয়াসহ অন্য আসামিরা। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পনা করে মাখন মিয়া। তার দলবল নিয়ে মজিদ মিয়ার বাড়িতে গোপন বৈঠকে পরিকল্পনা করেন। বৈঠকে মাখন মিয়ার বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা সহজ সরল প্রকৃতির শ্যালক কামাল উদ্দিনকে হত্যা করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথম পরিকল্পনা করা হয় ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর বানিয়াচং থানার সীমান্তবর্তী নবীগঞ্জ থানার লহরজপুর গ্রামের হাওরে। ওই দিন তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে ১৬ ডিসেম্বর রাতে কামাল উদ্দিনকে হাওরে পাঠিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেই মোতাবেক ভগ্নিপতি মাখন মিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী কামাল উদ্দিনকে লহরজপুর হাওরে পাঠানো হয়। সেখানে শাখাবরাক নদীর পাশে ধানক্ষেতে কামাল উদ্দিনকে পেছন দিক থেকে ধরে ফেলে শরীফ। এ সময় প্রথমে লেবু মিয়া পিকল দিয়ে কামালের বুকে ঘাঁই মারেন। এক পর্যায়ে মাখন, ফারুক, অনুসহ সঙ্গীয় লোকজন আঘাত করেন। এ সময় হামলাকারীরাই চিৎকার করে যে প্রতিপক্ষের লোকজন কামাল উদ্দিনকে মেরে পালিয়ে যাচ্ছে।
পরে স্থানীয় লোকজন কামালকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার পথে কামাল উদ্দিনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার তিন দিন পরে নিহতের বড় বোন এবং হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মাখনের স্ত্রী নবীগঞ্জ থানায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমে চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করে। ইতিমধ্যে ফারুক মিয়া ছাড়াও শরীফ মিয়া ও মুমিন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার মূল পরকল্পনাকারী মাখন মিয়া শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান পুলিশের সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা এই মুহূর্তে নিরাপরাধ দেখা যাচ্ছে। তদন্তে প্রমাণিত না হলে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।