বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ : ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ, ভোগান্তি
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক তিন জনের মধ্যে দুই জন হরিজন সম্প্রদায়ের হওয়ায় সড়ক অবরোধে নেমেছে হরিজন সম্প্রদায়ও। সাড়ে নয় ঘণ্টা ধরে চলমান অবরোধে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। চার দফা মেনে না নেওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে তাঁরা তিন দফা দাবিতে অবরোধ শুরু করেন।
শিক্ষার্থীদের চার দফার মধ্যে রয়েছে—ধর্ষকদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার, বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনকে অবরোধস্থলে এসে ফলপ্রসূ আলোচনা, শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সিসিটিভি থেকে পাওয়া ফুটেজ প্রদর্শন।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বশেমুরবিপ্রবির ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে উত্তাল হয়ে ওঠে গোপালগঞ্জ। ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী সদর থানা ঘেরাও করেন। এরপর আজ সকাল থেকে ঘোনাপাড়ায় অবস্থান নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা প্লাকার্ড নিয়ে মহাসড়কের উপর বসে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধের ফলে ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আটকাপড়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন।
শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার বিচার না নিয়ে ঘরে ফিরবেন না। এ ছাড়া পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে বলে শুনেছেন। সেটি জনসম্মুখে উন্মুক্ত করতে হবে।
এদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ শহরতলীর সোনাকূড় গ্রামের পিয়াল (২২), সুইপার কলোনির অন্তর (২২) ও জীবনকে (২৩) আটক করেছে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে দুপুরে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের নবীনবাগে ময়লা ফেলে অবরোধ করে হরিজন সম্প্রদায়।
অবরোধের কারণে ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় বিচার হোক, এটা আমরাও চাই। তিন জনকে পুলিশ আটক করেছে বলে শুনেছি। উপাচার্য, প্রক্টর তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এমন অবস্থায় সড়ক অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে রাখা ঠিক নয়।
এক যাত্রী বলেন, সড়কে অনেক অসুস্থ মানুষ আছেন। তাঁরা চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। বাসে অনেক বৃদ্ধ, শিশু ও নারী আছেন। এসব কথা নিশ্চয় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভেবে দেখবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) বলেন, ‘আমরা দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করছি। এরই মধ্যে তিন জনকে আটক করা হয়েছে।’
জানা গেছে, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী তাঁর বন্ধুর সঙ্গে সদর উপজেলার নবীনবাগের হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে আসছিলেন। পথিমধ্যে এক অটোরিকশা থেকে অন্তত সাত জন তাঁদের জোর করে তুলে নেয়। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে। সেখানে ওই ছাত্রীর সহপাঠীকে মারধর করে অপহরণকারীরা। পরে ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেছি।’
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) নিহাদ আদনান তাহিয়ান বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের টিম এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারবো।’
এদিকে, গতকাল রাতে দেওয়া আল্টিমেটামে আজ ভোর ৬টার মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের দাবি জানান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার পর থেকে চলছে অবরোধ কর্মসূচি। এতে বন্ধ হয়ে আছে যান চলাচল। দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।