বাজেট পেশ আজ, এবারও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত
ত্রয়োদশ (বাজেট) অধিবেশনের দ্বিতীয় কার্য দিবসে আজ বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বিকেল ৩টায় তাঁর দায়িত্বকালের তৃতীয় বাজেট, আওয়ামী লীগ সরকারের ২১তম এবং বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট উপস্থাপন করবেন। আর, এটি হবে বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশন।
এবারের বাজেট প্রণীত হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি উত্তরণের কৌশলকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে। যার সম্ভাব্য আকার দাঁড়াচ্ছে ছয় লাখ তিন হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতিটাও থাকছে বেশ বড়। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে সাত দশমিক দুই শতাংশ।
এর আগে গত বছর ১০ জুন করোনা মহামারির মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। এরপর ১১ জুন ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হয়।
করোনা মহামারির এই সময়ে এবারও বাজেট অধিবেশনের মেয়াদ স্বল্প সময়ের হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল থেকে শুরু হওয়ার পর মুলতবি দিয়ে দিয়ে ৩ জুলাই অধিবেশন শেষ হতে পারে। আর, সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর বাজেট নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে পাস করা হবে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বিকেল ৫টায় একাদশ সংসদের ত্রয়োদশ সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
করোনা মহামারি পাল্টে দিয়েছে অর্থনীতির সব হিসাবনিকাশ। বাজেটে বৈচিত্র্য তো দূরের কথা, হিমশিম খেতে হচ্ছে মৌলিক কাঠামো দাঁড় করাতেই। তাই বাজেটে, স্বভাবতই গুরুত্ব পাচ্ছে সম্পদ আহরণ, বণ্টন এবং করোনা মোকাবেলার কৌশল। অবস্থা অনুকূলে না থাকায়, চলতি বাজেট থেকে মাত্র ছয় শতাংশের মতো বাড়িয়ে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ছয় লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে সক্ষমতা বৃদ্ধি। যাতে করে (করোনা) তৃতীয় প্রবাহ যদি আসে। কোভিড না যায় আমরা যেন মোকাবিলা করতে পারি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ এবং অবকাঠামো। এই কয়েকটি ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হবে, বিনিয়োগ করতে হবে। বাড়াতে হবে, আপডেট করতে হবে। এই বাজেটেও আমরা তাই চালিয়ে যাব।’
এরই মধ্যে নতুন অর্থবছরের জন্য ১৪ শতাংশ আকার বাড়িয়ে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার এডিপির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়নি, তাই আসছে বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য থাকছে সাতের ঘরে। মহামারির মধ্যে বাজেট প্রণয়নে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জও মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারকে।
চলতি (২০২০-২০২১) অর্থ বছরের বাজেট ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার। আর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট অর্থাৎ ১৯৭২-৭৩ সালে বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। দেশের প্রথম বাজেট উত্থাপন করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ।
এদিকে চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার বাজেট ঘোষণা হয়েছিল গত বছরের ১১ জুন। এর পর মাত্র ৯ দিনের বাজেট আলোচনা শেষে তা পাস করা হয়। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম বাজেট অধিবেশন। এবারও করোনা পরিস্থিতির কারণে অল্প দিনে আলোচনা শেষ করে বাজেট পাস হবে।
করোনা মহামারির মধ্যে এবারও কঠোর স্বাস্থ্য বিধি বিধান মেনে বাজেট অধিবেশন চালানো হবে। সংক্ষিপ্ত সময়ে শেষ হবে বাজেট অধিবেশন। বিরতি দিয়ে এ অধিবেশন ১০ থেকে ১৩ কার্য দিবস চলতে পারে।
এ ছাড়া বাজেট পেশের পর ৪ ও ৫ জুন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ৬ জুন রোববারের কার্য দিবসে সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হবে। সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা শেষে ৭ জুন সম্পূরক বাজেট পাস করার কথা রয়েছে। এরপর বিরতি দিয়ে প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ওপর আলোচনা শুরু করা হবে। আর তা ৩০ জুন বুধবার পাস হতে পারে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবারও কোভিড টেস্টের নেগেটিভ সনদ নিয়ে সংসদ সচিবালয়ে প্রবেশ করতে হবে। প্রতি ৭২ ঘণ্টা পর পুনরায় নেগেটিভ সনদ মিললেই সংসদ সদস্যেরা কেবল অধিবেশনে যোগদান করতে পারবেন। যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁদেরও কোভিড নেগেটিভ সনদ লাগবে।
সংসদ সচিবালয় থেকে জানা গেছে প্রতিদিন ১১০ থেকে ১২০ জন সংসদ সদস্যকে অধিবেশনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ দূরত্বে বসে সংসদ অধিবেশন চলবে।
এবারও গণমাধ্যমকর্মীদের সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার থেকে সংসদ অধিবেশন কাভার করতে হবে। তবে বাজেট পেশের দিন এবং অধিবেশন শেষ হওয়ার দিন সংসদে সাংবাদিক লাউঞ্জে প্রবেশের সুযোগ থাকতে পারে। তবে, সে ক্ষেত্রে করোনা নেগেটিভ সনদ লাগবে। এজন্য গত মঙ্গলবার থেকে সংসদ মেডিকেল সেন্টারের পরিচালনায় কোভিড টেস্ট শুরু হয়েছে।