‘বাবা তুই আমাকে মারিস না, আমি তোর মা’
জমি লিখে না দেওয়ায় ৮০ বছর বয়সি বৃদ্ধা মাকে নির্যাতন করে দুই হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলের বিরুদ্ধে। হাত-পা, মাথাসহ ওই বৃদ্ধার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার ছেলেকে বলছিলাম বাবা, তুই আমাকে মারিস না, আমি তোর মা।’
দিনাজপুর শহরের বড়বন্দর নতুনপাড়া মহল্লায় গত মঙ্গলবার ঈদের দিন এ ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিক। তিনি বড়বন্দর নতুনপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তাঁর ছেলে আসামি মো. রাজীব আলী ন্যাশনাল ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই বৃদ্ধার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে মারা গেছেন। স্বামীও মারা গেছেন অনেক আগেই। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ছেলে মো. রাজীব আলী ব্যাংক কর্মকর্তা। বেশ কিছুদিন থেকে রাজীব মায়ের কাছে বসতবাড়ির ১৬ শতাংশ জমি লিখে নিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু, মা তাতে রাজি হচ্ছিলেন না।
এক সময় রাজীব বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করলে মা বাধ্য হয়ে তাঁকে তিন শতাংশ জমি লিখে দেন। এতেও রাজীব সন্তুষ্ট হননি। বাকি জমি লিখে না দেওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। গত ১৯ রমজান মাকে আবারও নির্যাতন করেন রাজীব। সেদিন পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের সমঝোতায় ছাড়া পান তিনি।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ঈদের দিন রাত ৮টার দিকে রাজীব ও তাঁর স্ত্রী খালেদা ওই বৃদ্ধাকে বাকি জমি লিখে দিতে চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন। যে লাঠির ওপর ভর করে মা চলাফেরা করেন, সেই লাঠি কেড়ে নিয়ে ও লোহার রড দিয়ে নির্যাতন শুরু করেন ছেলে। ফলে, ওই বৃদ্ধার দুই হাত ভেঙে যায়। মাথায় আঘাত পান, পায়ে তৈরি হয় ক্ষত। এর মধ্যে ছেলের স্ত্রী খালেদা বেগম বুকের ওপর চেপে বসে গলা চেপে ধরেন। এ সময় বড় ছেলের সন্তান লিমন ফুফুদের খবর দিলে তাঁরা গিয়ে মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ওই বৃদ্ধার দুই হাতের অস্ত্রোপচার করা হয়।
ওই বৃদ্ধার ছোট মেয়ে বলেন, ‘এর আগেও জমির জন্য আমার ভাই রাজীব মাকে মারধর করেছে। আবারও আমার ভাই ও ভাবি মাকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিয়ে নিজেই আবার মায়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গিয়েছিল। এ সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে।’
আরেক মেয়ে বলেন, ‘আমরা ভাই-বোন সবাই শিক্ষিত। আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। আমার মা সাবেক শিক্ষক। আমাদের পরিবারে এ ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। মায়ের ওপর নির্যাতনকারী আমার ভাই রাজীবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে করে আর কোনো সন্তান মায়ের ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন না করে।’
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে মামলার পর আসামি রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাঁকে আদালতে পাঠালে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।’