ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করতেই ১৪৪ ধারা : আমির খসরু
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঐতিহাসিকভাবে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঘাঁটি। তাই বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে, সভা-সমাবেশ পণ্ড করে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আজ শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে শহরতলীর বটতলী এলাকায় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আমির খসরু বলেন, আর কোনো ধারা দিয়ে লাভ হবে না। ধারার সময় শেষ হয়ে গেছে। এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আজকে যেভাবে ১৪৪ ধারা দিয়েছে এভাবে তারা চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, ফেনী, কক্সবাজারসহ আরও বিভিন্ন জেলায় দিয়েছে। কোনো লাভ হয়নি। যাদের মাধ্যমে এই অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার এ কাজগুলো করাচ্ছে তাদের প্রতি সদয় নিবেদন, চোখ-কান খোলা রাখুন, দেশে কী হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করুন।
সরকারকে অত্যাচারী, অবৈধ লুণ্ঠনকারী, দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে সরকারি কর্মকর্তাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমির খসরু বলেন, আপনার কাউকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সরকারি কর্মকর্তা হননি। সংবিধানের শপথ নিয়ে আপনারা সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন বাংলাদেশের জনগণের সুরক্ষার জন্য। সুতরাং এই কাজটা করেন সবার জন্য ভালো হবে।
আমির খসরু আরও বলেন, যারা ভোট চুরি, গুম, খুন, হত্যার সঙ্গে জড়িত, যারা গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত; তারা সবাই দেশে এবং দেশের বাইরে পর্যবেক্ষণে আছেন। এই সরকারের বিরিুদ্ধে বিভিন্ন দেশ থেকে নিষেধাজ্ঞা আসছে।
আমির খসরু স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ জেগে উঠেছে, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। চোরের ১০ দিন গৃহস্থের একদিন। ১০ দিন পার হয়ে গেছে। এখন চোর ধরতে হবে। চোরদের জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। যেমন বলা হতো তুই রাজাকার তুই রাজাকার। এখন আপনারা বলবেন তুই চোর। তুই ভোট চোর, তুই ভোট চোর। এদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ইতোমধ্যেই তাদের বুকের মধ্যে কম্পন শুরু হয়ে গেছে।
বিএনপির এই সমাবেশ শহরের ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টারে হওয়ার কথা ছিল। ছাত্রলীগও একই স্থানে সমাবেশ ডাকায় জেলা প্রশাসন আজ ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। পরে নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করতে না পেরে সদর উপজেলার বটতলী এলাকায় এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়।
এদিকে সমাবেশস্থলে আসার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার গাড়ি আশুগঞ্জ এলাকায় আটকে দেয় পুলিশ। পরে তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে অবস্থান নেন। সেখানে সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, উকিল আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া এমপি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে এম একরামুজ্জামান সুখন, ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় দুই ঘণ্টা পর সমাবেশে যোগ দেন।
এদিকে, ১৪৪ ধারার কারণে আন্তজেলা পরিবহণ বন্ধ রাখা হয়। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বন্ধ রাখা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শহরজুড়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল জেলা বিএনপির তিন শীর্ষনেতাকে আটক করে পুলিশ। শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৬টি স্থানে ৬০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।