লকডাউনের আগে পথে পথে মানুষের ভোগান্তি
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে তাদের রাজধানী থেকে বের হতে ও প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
এদিকে, লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আজ রোববারও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। এ ঘাট দিয়ে শুধু পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন চলাচলের কথা থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি চলতেও দেখা গেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ‘সীমিত লকডাউন’ আর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। এই সময়ে সারা দেশে গণপরিবহণ বন্ধ হয়ে যাবে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ির বাইরে যেতে পারবে না। লকডাউন মানাতে সারা দেশে মাঠে থাকবে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি রোধে লকডাউনের খবর ঘোষণার পর পরই রাজধানীতে এসে আটকাপড়া মানুষ বাড়িমুখো হতে শুরু করে। এ কারণেই ভোগান্তিতে পড়েছে চলতি পথের হাজারও মানুষ। ঢাকা ছাড়তে চাওয়া ও ঢাকামুখী যাত্রীদের দেখে মনে হতে পারে এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশের বিপন্ন শরণার্থী; যারা নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় সীমানা পাড়ি দিয়ে অন্য কোথায় যাচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়া মানুষ করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকারের লকডাউন ঘোষণার পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন।
সাভারের পথে রাজধানীর আমিনবাজার এলাকায় এক বৃদ্ধা (৬০) বলছিলেন, ‘এই যে মানুষের এত গাদাগাদি, মানুষ মানুষকে পিষে ফেলছে, এটা কি সরকার বলে দিছে, নাকি আমরা পাবলিকরাই এটা করছি।’
একই পথে হাঁটছিলেন আরেক বৃদ্ধ (৬৫); যার মাথায় ছিল বেশ ওজনদার বস্তা। তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘দেখেন বাবা, এই বস্তাটা নিয়া চার কিলোমিটার হেঁটে আসছি। এই বয়সে এটা কি আমি পারি? এই দুঃখ কই রাখি বাবা কন?’
আরেক কিশোরী গণপরিবহণ না পেয়ে নিজের দাদীকে নিয়ে হেঁটেই পথ দিয়েছেন বাড়ির দিকে। কিন্তু কিছু রাস্তা গিয়ে আর বৃদ্ধা হাঁটতে পারছিলেন না। ফলে একটু জিরিয়ে আর হাঁটতে শুরু করেন তারা; যদি একটা যানবাহন পাওয়া যায়। তবে চলতি পথে অনেকে স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা করলেও কিছু মানুষকে মুখে মাস্ক নিয়ে চলতে দেখা গেছে।
এদিকে লকডাউন ঘোষণায় যাত্রীদের বাড়তি চাপে মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে সীমাহীন যানজট। সাভারের আমিনবাজার থেকে হেমায়েতপুর পর্যন্ত যানজটে বৃদ্ধি পেয়েছে দুর্ভোগ।
এ ছাড়া চলমান এই পরিস্থিতিতে বেশি বিপদে পড়েছে দূর-দূরান্ত থেকে রাজধানীতে চিকিৎসা নিতে আসা অসংখ্য রোগী যাদের নগরীতে থাকার স্থায়ী ব্যবস্থা নেই।
রাজধানীতে ডায়ালাইসিস করতে আসছিলেন আবদুস সোবহান (৫০) নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা কীভাবে যাব, লকডাউন দিয়ে দিছে। আমি যদি সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিস না করি তাহলে তো মারা যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
হৃদরোগের চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মধ্যবয়সী এক নারী (৫০)। তিনি বলছিলেন তাঁর কষ্টের কথা, ‘আমি হার্টের রোগী কী করে এত হাঁটব। একটা গাড়ি নাই।’
এদিকে, আজ সকাল থেকে ফেরিতে ঢাকা এবং দক্ষিণাঞ্চলগামী হাজার-হাজার মানুষ পারাপার করতে দেখা গেছে। শুধু পণ্যবাহী এবং জরুরি যানবাহন চলাচলের কথা থাকলেও ফেরিতে ব্যক্তিগত গাড়িও পারাপার করছে।
ঘাটে এক যুবক (২৭) বলেন, ‘বাইরে বের হওয়া নিষেধ সেটা ঠিক আছে কিন্তু ঢাকায় থাকব কীভাবে, খাব কী? তাই কষ্ট হলেও বাড়ির দিকে পথ দিছি।’