লাশ ভেবে পুলিশে ফোন, পরে জানা গেল জীবিত
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা । গতকাল এ সময় মুষলধারে শিলাবৃষ্টি হচ্ছিল। কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের চরবাড়িয়া হাসপাতালের পূর্ব দিকে পাকা সড়কের পাশে ঝোপের মধ্যে চল্লিশোর্ধ একজন পুরুষের লাশ পড়ে আছে। সে লাশটি বৃষ্টিতে ভিজছে।
পাশের বাড়ির লোকজন বিষয়টি পেরুল উত্তরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিলীপ সিংহকে জানায়। তিনি লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আইয়ুবকে ফোন করে মরদেহটি উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন। থানার ওসির নির্দেশে তাৎক্ষনিক ইমার্জেন্সি পুলিশ কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআিই) নাজিম উদ্দিন ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন, একজন পুরুষ লোক রাস্তার পাশে স্যাঁতস্যাঁতে ঝোপে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন। মলমূত্র ত্যাগ করে কাপড়-চোপড় নষ্ট করেছেন। বৃষ্টিতে ভিজায় শরীর ঠাণ্ড হয়ে আছে। তবে, পালস আছে।
নাজিম থানার ওসিকে অবহিত করে পাশের বাড়ি থেকে বালতি করে পানি এনে অজ্ঞাত ব্যক্তিটির মলমূত্র পরিষ্কার করে লাকসাম সরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। জরুরি বিভাগের ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ‘আউট অব ডেঞ্জার’ বলে জানান । খুশি হন নাজিম। ওসিকে জানান, রোগী বেঁচে আছেন। তারপর থেকে ওসি’র নির্দেশে চিকিৎসা চলছে ওই ব্যক্তির।
লাকসাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের চেষ্টায় ওই ব্যক্তির জ্ঞান ফেরে। এরপর পুলিশ অফিসার নাজিম উদ্দিন তাঁকে নিজ হাতে নাস্তা করান।
এদিকে, লালমাই থানা পুলিশ কুমিল্লার বিভিন্ন থানা এলাকায় খোঁজ নিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। তার বোন শাহীনা বেগম ও ভগ্নিপতি আবু সাঈদ পুলিশকে জানান, ব্যক্তিটির নাম মো. জয়নাল আবেদীন (৪৫)। তিনি লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের চেঙ্গাচল গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে। তিনি অবিবাহিত। গত ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। কাঁর খোঁজে লাকসামের বিভিন্ন এলাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছিল। তবে, তাঁরা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেননি।
গতকাল শনিবার বিকাল ৫ টায় লাকসাম সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে লাকসাম উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে জয়নাল আবেদীনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন লালমাই থানার উপপরিদর্শক নাজিম উদ্দিন।
উপপরিদর্শক নাজিম উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘স্থানীয়রা যাঁকে লাশ ভেবে কাছে যায়নি, আমি তাঁর মলমূত্র পরিষ্কার করে গোসল ও চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পেরেছি। এতে আমি খুব শান্তি অনুভব করছি। বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করি বলেই এমন মানবিক কাজটি করার সুযোগ পেয়েছি। লালমাই থানার ওসি স্যার আমাকে এক্ষেত্রে সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন।’
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জরুরি মোবাইল টিমে কর্তব্যরত এসআই নাজিম উদ্দিন তাঁর ফোর্সসহ যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পেশাদারিত্বের সঙ্গে অজ্ঞান ব্যক্তির পরিচর্যা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসা শেষে অজ্ঞাত ব্যক্তি কে সুস্থ অবস্থায় তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট।