শিশু আইন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আইজিপি
রাজধানীর কলাবাগানের ঘটনা পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম, এখানে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। আজ সোমবার দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সেবা সপ্তাহের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
কিশোর গ্যাং মোকাবিলায় শিশু আইন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, কিশোর অপরাধের জন্য নতুন আইনে যে অবকাঠামোর কথা উল্লেখ রয়েছে, তা গড়ে না ওঠায় অনেক ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে অপরাধ দমনে। প্রজন্মকে সঠিক পথে চালানোর জন্য সামাজিক সচেতনতা জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ধর্ষণ করা হয়েছে। এখানে মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। উভয়েই কিন্তু শিশু, আমাদের দেশের আইনে। এই বর্তমান আইনে শিশুকে থানায় নিয়ে এলে প্রবেশন অফিসারকে হাজির করতে হবে। আবার দেশে পর্যাপ্ত প্রবেশন অফিসার নাই। এবং এই বিচার হতে হবে চাইল্ড কোর্টে। চিলড্রেন্স কোর্ট কয়টা আছে আমাদের দেশে? রাখতে হবে কারেকশন সেন্টারে, জেলে রাখা যাবে না। তাহলে কারেকশন সেন্টার কয়টা আছে?’
আইজিপি বলেন, মাদক সেবনের মাধ্যমে একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রতিটি পরিবারকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে র্যাবের সেবা সপ্তাহের শেষ দিনে দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়। সারা দেশে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর কাছে এ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
রাজধানীর কলাবাগানে নিহত ওই ছাত্রীর (১৭) পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সে এ বছর ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পরীক্ষার সাজেশন দেওয়ার কথা বলে গত ৭ জানুয়ারি ছাত্রীকে বাসায় ডেকে নেয় বন্ধুরা। তারপর ফোন করে ছাত্রীর মাকে জানানো হয়, সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে। এরপর ছাত্রীকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ছাত্রীর মা হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান, তার মেয়ে আর বেঁচে নেই। মেয়ের জননাঙ্গ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয় বলে ৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সেদিন বিকেলে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা এ কথা বলছি।’
সোহেল মাহমুদ আরো বলেন, ‘ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার করা হয়েছে। এতে তার জননাঙ্গ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আর ওই রক্তক্ষরণের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
এদিকে ইংরেজি মাধ্যমের ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার একমাত্র আসামি ফারদিন ইফতেখার ওরফে দিহান ৮ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিহানের আরো তিন বন্ধুকে আটক করেছিল। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে দিহানের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। তার ডিএনএ ও এ ঘটনায় জব্দ করা আলামত পরীক্ষার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা এই অনুমতি দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইহসানুল ফেরদৌস আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিহত ছাত্রীর সঙ্গে আসামির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসামির মা বাসায় না থাকায় সুযোগ পেয়ে ছাত্রীকে কলাবাগানের ওই ফাঁকা বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। এরপর জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। পরে ওই ছাত্রীর জননাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।’
এডিসি আরো বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ওই ছাত্রী মাথা ঘুরে পড়ে যায়। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হাসপাতাল থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়। পরে আমরা লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাই। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে।’