শেরপুরে অজ্ঞাত রোগে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু, খামারে আতঙ্ক
শেরপুরে অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে গরু। দুধের গ্রামখ্যাত তিলকান্দিসহ কয়েকটি এলাকায় এরই মধ্যেই মারা গেছে বেশ কিছু গরু। খামারিদের দাবি, এই সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এতে তাঁদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিরবতা এ আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলেছে আরও। কী করবেন, তা নিয়ে এখন দিশেহারা তাঁরা।
শেরপুর জেলা সদরের পাকুড়িয়া ইউনিয়নের তিলকান্দি, পূর্বপাড়া, ভাটিয়াপড়া গ্রামগুলো দুধের গ্রাম বলে পরিচিত। এসব এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুধ সরবরাহ করা হয়। এসব এলাকার খামারিরা জানান, গত তিন মাস ধরে মুখ দিয়ে ফেনা উঠে মারা যাচ্ছে গরু। কখনো কখনো অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেও মারা যাচ্ছে।
পূর্বপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত খামারি আজিজুর হক জানান, তাঁর দুটি গাভি মারা গেছে। এই দুটি গাভির আনুমানিক মূল্য সাত লাখ টাকা।
আজিজুর বলেন, ‘এ পর্যন্ত এই এলাকায় গরু মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে একটি বা দুটি গরু পালন করতেন। গরু মারা যাওয়ায় তাঁরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাঁদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন ভেঙে গেছে।’
আজিজুরের অভিযোগ, ‘অনেক উন্নয়নের কথা বললেও এক্ষেত্রে প্রাণি সম্পত অধিদপ্তর নির্বিকার। কোনো ধরনের দায়দায়িত্ব পালন করেনি তাঁরা। এমনকি কোনো পরামর্শও তাঁরা দেননি।’ তিনি ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অপর এক খামারি জানান, তাঁর চার লক্ষ টাকার গরু মারা গেছে। এতে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
এক নারী খামারি বলেন, ‘তিলকান্দিসহ কয়েকটি স্থানে অনেক গরু মারা যাচ্ছে। এখানের খামারিরা গাভীর ওপর নির্ভর করে চলেন। তাঁদের সাংসারিক খরচ নির্ভর করে গাভির ওপর। এখন গাভি পড়ে যাচ্ছে, আর মারা যাচ্ছে। সংসার, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা কীভাবে চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
জানতে চাইরে জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত এনটিভি অনলাইনকে জানান, যে বেসরকারি কোম্পানির বীজ দিয়ে খামারিরা গরুর গর্ভধারণ করিয়েছেন, তা দীর্ঘসময় ফ্রিজিং করার ফলে এমন সমস্যা হচ্ছে। কারণ, এসব বাছুরগুলো জন্ম নেয় ফুসফুসের অসুখ নিয়ে এবং মারা যায় শ্বাসকষ্টে।
ডা. পলাশ কান্তি বলেন, ‘আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে এসব বাছুর খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। এটাকে স্বাভাবিক মৃত্যুই বলা যায়।’ তবে তিনি গরুর এ ধরণের মৃত্যুর কারণ জানার জন্য ঢাকায় ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পলাশ বলেন, ‘আমরা তিনটি গরু মৃত্যুর খবর পেয়েছিলাম। দুটি গরু মৃত্যুর খবর ফোনে পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। আশপাশের মানুষের কথা ও লক্ষণ দেখে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হয়েছে। নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আরেকটি গরু অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়াজনিত কারণে মারা গেছে বলে মনে হয়েছে।’
৪০টি গরু মৃত্যু ও প্রাণিসম্পদ থেকে সার্জন গেলে টাকা দিতে হচ্ছে বলে খামারিদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘৪০টির মতো গরু মৃত্যুর তথ্য অসত্য। এ ছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে একটি টাকা ফি-ও নেওয়া হয় না।’ ডা. পলাশ কান্তি দত্ত বলেন, ‘ইমারজেন্সি কিছু ওষুধ প্রয়োজন হয়। তখন প্রেসক্রাইব ওষুধ নিয়ে গিয়ে দিতে দিতে অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে খামারির অনুরোধে কিছু ওষুধ নিয়ে যাওয়া হয়। সেই ওষুধের দামটি নেওয়া হয়।’