সংঘর্ষ ও বর্জনের মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
টানটান উত্তেজনা, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হাতবোমা বিস্ফোরণ আর ভোট বর্জনের মতো ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। ভোট চলাকালে চারটি পৌরসভায় ভোট বর্জন করেন বিএনপির মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থীরা। একটিতে ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। এ ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীও ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলছে গণনার কাজ। কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে পোলিং এজেন্টদের কাছে ফলাফল বিতরণের পর তা কেন্দ্রীয়ভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেবেন প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্ব কর্মকর্তা। রিটার্নিং কর্মকর্তা সব কেন্দ্রের ফলাফল মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করবেন।
ইসি জানিয়েছে, কিছু বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া মোটামুটি ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে। আর যেখানে ‘টুকটাক ঝামেলা’ হয়েছে, সেখানের বিস্তারিত তথ্য এলে বিষয়টি বোঝা যাবে। তবে গণমাধ্যমে বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ভোটার উপস্থিতি ভালোই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অনিয়ম ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা শুনে দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব স্থানে ঝামেলা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য পেলে মন্তব্য করা যাবে। তথ্য অনুযায়ী, কোথাও ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার হলে ইসি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
এদিকে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা, রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা, পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন। মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভায় ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী। সবশেষ মোংলা পোর্ট পৌরসভায় একযোগে ১২ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ভোট চলাকালে দেখা গেছে, কয়েকটি এলাকায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি, গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনা। বিএনপির প্রার্থীরা বলছেন, এই ভোট কারচুপি করেছে সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা।
এই ধাপে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি-জাপা, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এর আগে প্রথম ধাপে পাঁচটি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। এ ধাপে আটটি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট মেয়র পদপ্রার্থী ২২১ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৩৩২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ৭২৪ জন।
এবারের পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এই ধাপে ছয়টি পৌরসভায় প্রার্থী দিতে পারেনি।
দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভা রয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৩টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় ধাপের ৬৪ পৌরসভায় ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৮টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে মেয়র পদে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। তখন ২০টি দল ভোটে অংশ নেয়।
আজ যে ৬০ পৌরসভায় ভোট হয়েছে
গাজীপুরের শ্রীপুর (ইভিএম), চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ (ব্যালট), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), বেলকুচি (ব্যালট), উল্লাপাড়া (ব্যালট), সদর (ব্যালট) ও রায়গঞ্জ (ব্যালট), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ (ব্যালট), কুষ্টিয়া সদর (ব্যালট), কুমারখালী (ইভিএম), ভেড়ামারা (ব্যালট) ও মিরপুর (ব্যালট), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (ব্যালট) ও কমলগঞ্জ (ব্যালট), নারায়ণগঞ্জের তারাবো (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী (ব্যালট), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ (ব্যালট) ও সদর (ব্যালট), দিনাজপুর সদর (ব্যালট), বিরামপুর (ব্যালট) ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া (ব্যালট), ফরিদপুর (ইভিএম), সাঁথিয়া (ব্যালট) ও ঈশ্বরদী (ব্যালট), রাজশাহীর আড়ানী (ইভিএম), ভবানীগঞ্জ (ব্যালট) ও কাকনহাট (ইভিএম), সুনামগঞ্জ সদর (ব্যালট), ছাতক (ব্যালট) ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), হবিগঞ্জের মাধবপুর (ব্যালট) ও নবীগঞ্জ (ব্যালট), ফরিদপুরের বোয়ালমারী (ব্যালট), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম) ও মুক্তাগাছা (ব্যালট), মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর (ব্যালট) ও গোপালপুর (ব্যালট), বগুড়ার শেরপুর (ব্যালট), সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও সান্তাহার (ইভিএম), পিরোজপুর সদর (ইভিএম), নেত্রকোনার কেন্দয়া (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকুপা (ইভিএম), পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদর (ইভিএম), বান্দরবান জেলার লামা (ব্যালট), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী (ইভিএম), কুমিল্লার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জ সদর (ব্যালট) ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহাট (ইভিএম) এবং বাগেরহাটের মোংলা (ইভিএম) পৌরসভা।