সকালে তালিকা থেকে নাম বাদ, দুপুরে মৃত্যু বীর মুক্তিযোদ্ধার
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) গঠিত কমিটি দ্বারা নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের প্রতিবেদন গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি সাঁটানো হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নোটিশ বোর্ডে। ওই তালিকায় সাক্ষী ও মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য সঠিক নয় দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলীর (৮০) নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এরপর গতকাল দুপুরে হঠাৎ করে মৃত্যু হয় সাহার আলীর। যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনে বাতিলের তালিকায় নাম থাকার কথা শুনে সাহার আলী স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁর পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
সাহার আলী স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তাঁর গেজেট নম্বর-৩০৩৪।
জানা গেছে, চলতি মাসের ৬ ফেব্রুয়ারি ধামইরহাট উপজেলার ৮৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়। প্রতিবেদন ফরমে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর চলতি মাসের ২২ তারিখে দেখানো হলেও তা প্রকাশ করা হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। এতে ৫৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম বাতিল করা হয়। বাতিলের তালিকায় ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলীর নামও।
এদিকে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ধামইরহাট ইউনিয়নের অন্তর্গত নিজ গ্রাম নেউটা গোপাইডাঙ্গায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় সাহার আলীকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও গণপতি রায়, ধামইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফরমুদ হোসেন প্রমুখ।
সাহার আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন জানান, তাঁর বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু জামুকা কর্তৃক যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনে বাতিল তালিকায় নাম থাকার কথা শুনে আমার বোনের বাড়ি সাহাপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্ট্রোক করে মারা যান।’
উপজেলায় যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফরমুদ হোসেন জানান, ‘সাহার আলী ছিলেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর নাম এভাবে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি তিনি সহ্য করতে পারেননি। একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপর এটি অবিচার বলে মনে করি।’
এ ব্যাপারে ধামইরহাটের ইউএনও ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব গণপতি রায় বলেন, ‘যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গের এ মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র নেই। তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি। অসুস্থতার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এটা প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যাঁরা প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলীর মৃত্যুর পর তাঁকে সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।’