সকালে বোনকে নিতে এল ভাই, বিকেলে মিলল লাশ
মাদারীপুরের শিবচরে সকালে বোনকে শ্বশুর বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে এলো ভাই। বোনজামাই বাড়ি না থাকায় ফিরে গিয়ে বিকেলে আবার বোনকে নিতে এসে পেল বোনের লাশ। বসতঘর থেকে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এদিকে ওই গৃহবধূর পরিবারের দাবি, তাঁকে হত্যা করে লাশ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা গৃহবধূর স্বামীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
নিহত গৃহবধূর নাম রেশমা (২০)। তিনি উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গ্রামের দাদন শেখের মেয়ে। স্বামীর নাম ঠান্ডু জমাদ্দার। তিনি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের তাহের ফকির কান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে রেশমার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ঠান্ডু জামাদ্দারের। বিয়ের পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির সঙ্গে রেশমার মনমালিন্য চলছিল। এতে প্রায়ই রেশমার সঙ্গে তাঁর স্বামী ঠান্ডুর ঝগড়া হতো। রেশমাকে ঠান্ডু মারধরও করতো বলে রেশমার পরিবারের অভিযোগ। আজ সকালে রেশমাকে বাবার বাড়ি নিয়ে যেতে তাঁর ভাই মুনকির শেখ দুলাভাইয়ের বাড়িতে আসেন। বোনকে বাড়ি নিয়ে যাবে বলে রেশমার শাশুড়ির কাছে বলে। ঠান্ডু বাড়ি নেই অজুহাতে রেশমার শাশুড়ি তাঁকে পরে আসতে বলে। তাই মুনকির একই গ্রামে নানা বাড়িতে চলে আসেন।
এদিকে, স্বামী ঠান্ডু বাড়ি আসার পর সব শুনে রেশমাকে বাবার বাড়ি যেতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় রেশমার। পরে ঠান্ডু বাড়ি থেকে বাইরে চলে যায়।
এদিকে রেশমার ভাই মুনকির শনিবার বিকেলে আবার আসে রেশমাকে নিতে। এ সময় রেশমাকে অনেক ডেকেও ঘরের ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে মুনকিরসহ স্থানীয়রা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে ঘরের আড়ার সঙ্গে রেশমার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা কুতুবপুর বাজার থেকে স্বামী ঠান্ডুকে আটক করে রেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজুল হোসেনসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে স্বামী ঠান্ডুকে আটক করে।
নিহত রেশমার ভাই মুনকির শেখ বলেন, ‘সকালে আমার বোনকে নিতে এলে বোনজামাই ঠান্ডু বাড়ি না থাকায় আমার বোনের শাশুড়ি আমাকে চলে যেতে বলেন। বিকেলে এলে আমার বোনের ঘর বাইরে থেকে শিকল আটকানো দেখি। পরে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে আমার বোনের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখি। আমার বোনকে ওরা মেরে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’
নিহতের বাবা দাদন শেখ বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে তার শাশুড়ি অনেক কষ্ট দিতেন। এ নিয়ে জামাই ঠান্ডুর সঙ্গে প্রায়ই রেশমার ঝগড়া হতো। কিন্তু এভাবে আমার মেয়েকে ওরা পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলবে এটা ভাবিনি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজুল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়রা গৃহবধূর স্বামীকে আটকে আমাদের হাতে সোপর্দ করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে পাঠানো হবে। এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা জানা যাবে রিপোর্ট পাওয়ার পর। তবে প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা মনে হচ্ছে।’