সাতক্ষীরার শেখপাড়া শতভাগ ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম
মাত্র কদিন আগেও যে গ্রামের মানুষ করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে এমনটি বলতে ভয় পেতো। এমনকি তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছিল ভ্যাকসিনভীতি, সেই গ্রাম এখন শতভাগ ভ্যাকসিনেটেড। বলছিলাম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের জোড়দিয়া গ্রামের শেখপাড়ার কথা।
একদল তরুণ শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টায় জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের শেখপাড়া গ্রামে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। গ্রামের মানুষ পর্যায়ক্রমে টিকা নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জোড়দিয়া গ্রামকে শতভাগ ভ্যাকসিনেটেড বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
দুই হাজারেরও বেশি জনগোষ্ঠীর এই গ্রামে ভোটার সংখ্যা এক হাজারের বেশি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই গ্রামটিতে ছড়িয়ে পড়েছিল সর্দি-কাশি, জ্বরসহ করোনার নানা উপসর্গ। অথচ গ্রামবাসী তা চেপে রাখছিলেন সামাজিক নানা কারণে। তারা টিকা নিতেও ভয় পাচ্ছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, নমুনা পরীক্ষা করালে করোনা ধরা পড়বে। ফলে গ্রামে আর টিকতে পারবেন না।
গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে পাঁচটি পরিবারে করোনা থাবা মারে। হাসপাতালে নিয়ে তাদের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। তারপরও গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং টিকা নেওয়ায় অনাগ্রহ জানিয়ে আসছিল।
বিষয়টি নজরে আসে জোড়দিয়া গ্রামের ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শেখ শাকিল হোসেনের। শাকিল তাঁর বন্ধু আরাফাত হোসেন, মিয়ারাজ হোসেন, হাসানুর রহমান, শাকিবুর রহমান, মাহবুবুল হক, আসগর আলী, তৌফিকুজ্জামান ও রোহেল উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে প্রচারনায় নেমে পড়েন। তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নমুনা পরীক্ষা করতে হবে এবং টিকা নিতে হবে।
শাকিল হোসেন জানান, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অনেক চেষ্টার পরেও খুব বেশি সাড়া মিলছিল না। অবশেষে বিষয়টি স্থানীয় মসজিদের ইমাম মওলানা ফরিদ উদ্দিন আরারীকে জানানো হয়। তিনি জুম্মার নামাজ শেষে মুসল্লিদের মধ্যে করোনার টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুল ধরেন।
শাকিল আহমেদ আরও জানান, স্থানীয় গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ মোনায়েম হোসেন নিজেও এই প্রচারনায় এগিয়ে এসে তাদের সহায়তা করেন।
শাকিল হোসেন আরও জানান, তিনি গ্রামের মানুষকে ডেকে ডেকে নিবন্ধন করান এবং তাদের টিকা কার্ড বের করে টিকা গ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন। তিনি তাদের নমুনা দিতেও আগ্রহী করে তোলেন। এরই মধ্যে শেখপাড়া এলাকার টিকা গ্রহণে সক্ষম সব বয়সের মানুষই টিকা নিয়েছেন। খবর পেয়ে ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ শামসুর রহমান শেখপাড়াকে ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
শাকিল বলেন, ‘এখন গ্রামের সব মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। তাদের মধ্য থেকে ভ্যাকসিন ভীতি পুরোপুরি দূর হয়েছে।’