সিনহার সহযোগী শিপ্রার মাদক মামলার প্রতিবেদনে পুলিশের নারাজি
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের সহযোগী শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে করা মাদক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজি দিয়েছে পুলিশ। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের করা এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে শিপ্রা দেবনাথকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেনের আদালতে মাদক মামলার বাদী রামু থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শফিকুল ইসলাম এই নারাজি আবেদন দেন। বাদীপক্ষে নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া। গত ১৩ ডিসেম্বর র্যাব এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
আদালতে শুনানি শেষে আজ দুপুরে শিপ্রা দেবনাথের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অরূপ বড়ুয়া তপু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশের করা মাদক মামলার র্যাবের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে পুলিশ নারাজি দেওয়ায় আজ এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত। চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও নারাজি আবেদন নিয়ে শুনানি হয়েছে। আদালত আদেশের জন্য পরবর্তীতে দিন রেখেছেন। এর পাশাপাশি শিপ্রা দেবনাথের জামিন স্থায়ী করেছেন।
এ সময় সেখানে আসামি শিপ্রা দেবনাথও উপস্থিত ছিলেন। মেজর সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সন্তুষ্টির কোনো বিষয় না। কারণ, আমরা আর সিনহাকে ফিরে পাব না। এখন আমরা এই মামলার বিচারকাজ ও রায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।’
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন। ওই রাতেই মেরিন ড্রাইভ রোডে অবস্থিত হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে মেজর সিনহার কক্ষ তল্লাশি করে সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ, শিফাতসহ তিনজনকে আটক করে রামু থানার পুলিশ। পরে একজনকে ছেড়ে দিয়ে শিপ্রা ও শিফাতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরের দিন ১ আগস্ট রামু থানার এএসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দায়ের করে। পরে আদালতের নির্দেশে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। মামলাটি তদন্ত করেন র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার। তিনি গত ১৩ ডিসেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। একই দিন মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়।
সিনহা হত্যার ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাবকে।
র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দেন। এর মধ্যে ১৪ জন কারাগারে আছেন। একজন পলাতক। এই অভিযোগপত্রটি গত ২১ ডিসেম্বর আদালত গ্রহণ করেন।
এই মামলায় কারাগারে থাকা ১৪ আসামি হলেন—বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।