সিনহা হত্যা মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ৫ সেপ্টেম্বর থেকে
কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তিন দিনে দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তারা হচ্ছেন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ও এক নম্বর সাক্ষী মেজর সিনহার সহযোগী সায়েদুল ইসলাম সিফাত।
তৃতীয় দিন আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় সিফাতের জেরা সম্পন্ন হলে আদালতের বিচারক কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আগামী ৫, ৬, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, আসামি পরিদর্শক লিয়াকতের পক্ষের আইনজীবী আদালতে নানা অজুহাতে দরখাস্ত দিয়ে মামলা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। আজ সাক্ষী সিফাতের জেরাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতে আসামি লিয়াকতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বাক্ষর তাঁর নিজের স্বাক্ষর নয় বলে দরখাস্ত দিয়েছেন। এ সময় যেটা মোটেই সমীচীন নয়। এটা আসামিদের মামলা থেকে বাঁচাতে তাদের আইনজীবীদের কৌশল।
ফরিদুল আলম আগামী ধার্য দিনে ১০ থেকে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপর দিকে বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, মামলার এজাহারে এবং জবানবন্দিতে এক নম্বর সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বক্তব্যে গড়মিল রয়েছে। তিনি এজাহারের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আজ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুলতবি সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। সিফাত হত্যার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন।
মামলায় সাক্ষ্যদানের ধার্য দিনের প্রথম দিনে আদালতে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। পরে দ্বিতীয় দিন বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে শেষ হয় তাঁকে ১৫ আসামির আইনজীবীদের জেরা।
এরপর আদালতে সাক্ষ্য দেন ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। দ্বিতীয় দিনে তাঁর সম্পূর্ণ সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এতে রাত ৮টায় বিচার কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করে তৃতীয়দিনে তা গ্রহণ করা হবে বলে আদেশ দেন আদালত।
আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ১৫ আসামিকে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, বুধবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে দ্বিতীয় দিনে সাক্ষ্যদানে অংশ নেওয়া সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুলতবি সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার তৃতীয় দিনের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। তাঁর সাক্ষ্যদান শেষ হলে আসামিদের আইনজীবীরা জেরা শুরু করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানান, প্রথম দফায় তিনদিনে সাক্ষ্যদানের জন্য মামলার ১৫ আসামিকে আদালতে উপস্থিত থাকতে সমন জারি করা হয়েছিল। গত তিন দিনে দুইজন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ সম্পন্ন হলো।
গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
অন্যদিকে ঘটনার পরপর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি ও রামু থানায় আরেকটি মামলা করে।
সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব ছাড়া অন্য ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তৎকালীন র্যাব ১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাস ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পরির্দশক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ এবং টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব।
গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচার মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।