সিরাজগঞ্জে দ্রুতগতিতে বাড়ছে যমুনার পানি, তীব্র নদীভাঙন
সিরাজগঞ্জে দ্রুতগতিতে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই নদীর তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে বাঁধভাঙা ও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ বহু স্থাপনা। ভাঙন রোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ৩১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিন যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড আশঙ্কা করছে।
এদিকে, গত ২ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বন্যার সতর্কবার্তা জারির পর থেকে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে শুরু হয় তীব্র নদীভাঙন। সবচেয়ে বেশি ভাঙছে এনায়েতপুরের ব্রক্ষনগ্রাম, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়ন এলাকা। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ফসলি জমিসহ বহু স্থাপনা। ভাঙনকবলিত এলাকার অনেকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। নদীতে বাড়িঘর, ফসলি জমি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের ছোটচাঁনতারা গ্রামের মাহমুদ আলী বলেন, ‘যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে আমার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাদাম, তিল, কাউন, ইরি ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে তিল, দুই বিঘা জমিতে বাদাম রোপণ করেছিলাম। কিন্তু, পানি বৃদ্ধির কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে।’
চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান ও বাদাম রোপণ করেছিলাম। কিন্তু, পানিতে ফসল নষ্ট হয়েছে। হালের খরচও ওঠাতে পারিনি। এতে আমার ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছি।’
এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকার আব্দুল মজিদ বলেন, ‘যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে বাড়িঘর রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে এ এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে এলাকার মানুষ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেত।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধসহ অন্যান্য বাঁধ যেন ভেঙে না যায়, সেজন্য যমুনা নদীর তলদেশে প্রতিনিয়ত সার্ভে করা হচ্ছে। কোথাও ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’