সিরাজগঞ্জে নদীগর্ভে বিলীন হলো একটি বিদ্যালয়, হুমকির মুখে আরেকটি
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীভাঙনে চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে চৌহালীতে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আরেকটি ভবন ভাঙনের মুখে। ভবনটির অধিকাংশ নদীর পাড়ে ঝুলে আছে। যেকোনো সময় যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ায় প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়টি রক্ষায় নদীতীরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে মাটি ও গাছের ডালপালা ফেলে চেষ্টা করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। একই সঙ্গে চারটি গ্রামে ভাঙন চলছে।
নদীভাঙন ঠেকাতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যথাসময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
যমুনার তীব্র স্রোতে দেওয়ানতলা, সংকরহাটি, গাবেরপাড়, মাঝগ্রাম সদিয়া ও চাঁদপুর গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন গতকাল মঙ্গলবার ভোরে যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরেকটি ভবন ঝুলে আছে। এই ভবনটিও যেকোনো সময় যমুনার গর্ভে বিলীন হবে।
শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও রেখা খাতুন জানায়, স্কুলঘর নদীতে চলে গেল। এখন আমরা লেখাপড়া করব কোথায়। আমরা একটা ঘর চাই। আবার স্কুলে যেতে চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম, সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ভবনটি আমাদের চোখের সামনে বিলীন হলেও করার কিছু নেই। এটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার বলেও রক্ষা হলো না। যদি এখানে স্থায়ী নদীতীর সংরক্ষণ কাজ করে দিত তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এখন দ্রুত একটি ঘরের ব্যবস্থা না হলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।’
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য রমজান আলী শেখ বলেন, ‘চাঁদপুরসহ প্রায় চারটি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। স্কুলটিও নদীগর্ভে বিলীন হলো। হুমকিতে আরেকটি হাই স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর কত বাড়ি ঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীর পেটে গেলে স্থায়ী বাঁধের কাজ হবে। যদিও এর আগে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটার যথাযথ কাজ না হওয়ায় ভাঙন চলমান রয়েছে। এ জন্য পাউবা কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের লোকজন দায়ী।’
এ বিষয়ে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ বলেন, ‘ভাঙন রোধে শুনেছি একটি প্রকল্প অনুমোদন হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার চারটি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। এখানে পাউবো কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি রয়েছে।’
চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও যমুনা নদী থেকে বিদ্যালয়ের ভবনটি ২০ থেকে ২৫ ফুট দূরে ছিল। ওই সময় যমুনার পানিও কমে গিয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল, এ বছর আর পানি বাড়বে না। তারপরও আমরা শ্রমিক দিয়ে নদীতীরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে মাটি ও গাছের ডালপালা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। মঙ্গলবার সকালে স্কুল ভবনে ধস শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরই ভবনটি নদীগর্ভে হারিয়ে যায়। আমরা সার্বিক বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’