সীতাকুণ্ডে এখনও দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন, ২৪ ঘণ্টায়ও হয়নি নির্বাপন
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হতে চললেও নির্বাপণ হয়নি আগুন। এমনকি, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণেও নিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। বরং, সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। যদিও ভয়াবহতা নেই বলে জানান তাঁরা।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০ উদ্ধারকর্মী রয়েছেন। নিহতের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া উদ্ধারের পাশাপাশি আহতদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সর্বশেষ দশ পুলিশসহ প্রায় কয়েকশতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার সন্ধ্যায় ৭টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখনো শঙ্কা কাটেনি। বরং, আগুন বিভিন্ন কনটেইনারে জ্বলছে। রাসায়নিক পদার্থের কারণে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে, ভয়াবহতার শঙ্কা নেই।’
শাহজাহান বলেন, ‘কেমিক্যাল থাকায় কখন কোন কন্টিনার জ্বলে ওঠে ও বিষ্ফোরণ ঘটে, তা বলা মুশকিল। তবে, সতর্ক থাকায় আগুনের ভয়াবহতা এখন আর নেই।’
জানা যায়, এখনও বিস্ফোরণ ঘটছে এবং কনটেইনারের ভেতরে আগুন জ্বলছে। একইসঙ্গে চলছে উদ্ধারের কাজও।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ বিশেষ টিম কাজ করছে। তবে, আগুন ডিপো এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। কিন্তু, বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে। একেক কেমিক্যাল একেক ধরনের, সেজন্য সময় লাগছে। তা ছাড়া মালিকপক্ষ কেউ না থাকায় কোথায় কোন কেমিক্যাল রয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। তবে, আমরা চেষ্টা করছি আগুন যেন সমুদ্র এলাকা পর্যন্ত যেতে না পারে।’
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শনিবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় তারা। এরপর তাদের আটটি ইউনিট কাজ শুরু করে। কিছু পরে ঘটনাস্থলে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের আরও সাতটি ইউনিট। ভোরের দিকে আশপাশের জেলা থেকে পাঁচটিসহ ১০টি ইউনিট যোগ দেয়। তবে, বিস্ফোরণ অব্যাহত থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দীর্ঘক্ষণ আশপাশে যেতে পারেননি। এর সঙ্গে যোগ হয় পানির স্বল্পতা। ডিপোতে কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আহতদের সংখ্যাও বেড়ে চলছে। সেখানে ভর্তি হওয়া আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা সাড়ে চারশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যান্য হাসপাতালেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
অন্যদিকে, পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে রাসায়নিক পদার্থ। ড্রেনের মাধ্যমে রাসায়নিক পদার্থ সমুদ্রে ছড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ তৈরি করে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী।
এ বিষয়ে চট্রগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করার জন্য সকাল থেকেই এখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পরে রাসায়নিক পদার্থ ড্রেন দিয়ে সমুদ্রে পৌঁছাতে পারে বলে আমাদের ধারণা। এটি যাতে সমুদ্রে পৌঁছাতে না পারে, সেজন্য বালু দিয়ে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এ অগ্নিকাণ্ডে ১০ পুলিশসহ দেড় শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। নাশকতা কি না প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন ডিপো পরিচালক। এ ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ডিপোতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পেছনে মনিটরিং টিমের অবহেলা ছিল বলে প্রাথমিক ধারণার কথা জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আজ রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।’ আজকের মধ্যেই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন তিনি।