স্বপনের মরদেহ পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে স্বজনদের?
রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগেই মেহেদী হাসান স্বপনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় বড়ভাই তানভীর হাসান সোহাগের। তখন স্বপন বাংলাদেশ স্যানিটারি নামের একটি দোকানে ছিলেন। এরপরই ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এ খবর কানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সোহাগ কল দেন স্বপনকে। কিন্তু, মুঠোফোনে আর কল বাজেনি। ফোন বন্ধ!
ফলে, অস্থির হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দুর্ঘটনার পর বড়ভাই সোহাগ তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পাঠান ঘটনাস্থলে। কিন্তু, কোনো হদিস মেলেনি। কেউ খবর জানাতে পারেনি সোহাগকে। তাই, আজ বুধবার ভোরে সোহাগ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সকালে পৌঁছান। সঙ্গে ঢাকায় থাকা তাদের আত্মীয়-স্বজনও এসেছেন। সবার চোখে-মুখে বিষণ্নতা।
তানভীর হাসান সোহাগ সকাল থেকেই বিস্ফোরিত ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুরে যখন ফায়ার সার্ভিসের দল উদ্ধার কাজ করে তখনও সোহাগ সেখানেই বসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্বজনেরা। এর ফাঁকে একবার এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তখন বিলাপ করতে করতে সোহাগ বলছিলেন, ‘আমার ভাই ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছে। ভাইয়ের খুব কষ্ট হচ্ছে। আমারও কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ তোকে বাঁচিয়ে রাখুক ভাই।’
তানভীর হাসান সোহাগ বলেন, ‘গতকাল বিকেল ৩টার দিকে আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। বিস্ফোরণের কথা জানার পরই আমি ওর ফোনে কল দিই। কিন্তু বন্ধ পাই। সব লোকজনকে জানাই। কেউ খোঁজ দিতে পারেনি। স্বপনের সঙ্গে আরও দুইজন দোকানে ছিল। তাদের নাম মির্জা আর আশিক। ওরা দুজনই শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। নেই শুধু স্বপন। ওরা কথাও বলতে পারছে না। তাই কিছুই জানতে পারছি না।’
দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হয় তখনও তানভীর হাসান সোহাগ অপেক্ষা করছিলেন। মাঝেমধ্যে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কথা বলতে বলতে চোখ ভিজে আসছিল তাঁর। এ দৃশ্য দেখে স্বজনেরাও কান্নাকাটি করছিল। হঠাৎ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নিখোঁজ মোমিনুল ইসলাম সুমন ও মোহাম্মদ রবিন হোসেন শান্তের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল।
উদ্ধার করার পর মরদেহ দুটি নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)। তখন সোহাগও চলে যান ঢামেক। কিন্তু, না! তখনও সোহাগ মেহেদী হাসান স্বপনকে উদ্ধাদের তথ্য জানতে পারেন না। তাঁকে ঢামেক থেকে জানানো হয়, স্বপনকে পাওয়া যায়নি। স্বপনের পরিবার যোগাযোগ করে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে। ফায়ার সার্ভিস থেকে তাদের জানানো হয়, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে’। কিন্তু স্বপনের মরদেহ পেতে স্বজনদের আর কত অপেক্ষা করতে হবে?