স্বাস্থ্যসম্মত মাছ উৎপাদনের দিকে নজর সরকারের
শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়, এবার সরকারের নজর নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাছ উৎপাদনের দিকে। মাছের মান নিয়ন্ত্রণে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি। ফিরিয়ে আনা হয়েছে ৩৬ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ। মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে ময়মনসিংহে করা হয়েছে লাইভ জিন ব্যাংক। নিজস্ব গবেষণায় উদ্ভাবন করা হয়েছে সুবর্ণ রুই নামে দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক উৎপাদনশীল মাছ। এসব কর্মযজ্ঞে ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের মোট জিডিপির বড় একটি অংশ আসছে মৎস্য খাত থেকে। কৃষিজ জিডিপির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ যোগ করছে এই খাত। খোদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন এসব তথ্য।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদপ্তরের সভা কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেছেন, বিগত ১৬ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মোট জিডিপির তিন দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ মৎস্যখাতের অবদান। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কারণে। মিঠা পানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ—সবক্ষেত্রে আমাদের অভাবনীয় সাফল্য এসেছে।
মৎস্য খাতে বাংলাদেশ একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য নিরাপদ মাছ উৎপাদন। শুধু মাছের উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, নিরাপদ ও পুষ্টিকর মাছ উৎপাদনে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। ভোক্তার কাছে আমরা নিরাপদ মাছ পৌঁছে দিতে চাই। পৃথিবীর প্রায় ৫২টি দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের মাছের চাহিদা রয়েছে। এসব দেশে বিভিন্নভাবে মাছ রপ্তানি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ও তার সরকারের ব্যবস্থাপনায় মাছের মান নিয়ন্ত্রণে দেশে তিনটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হবে। কোনো দেশেই যাতে মাছের সঙ্গে বিষাক্ত উপাদান না যায়, এটা আমরা নিশ্চিত করছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় মৎস্য খাতে যথাযথ পরিচর্যা না হওয়ায় ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছিল। আমাদের নিজস্ব মাছের বিশাল অংশ হারিয়ে গিয়েছিল। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ৩৬ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মাছ যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে, যেখানে শতাধিক প্রকারের মাছ থাকবে। কোথাও কোনো মাছ হারিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলে ওই মাছের রেণু ও পোনা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। এ ছাড়া নিজস্ব গবেষণা থেকে সুবর্ণ রুই নামক একটি দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক উৎপাদনশীল মাছ উদ্ভাবন করা হয়েছে।’
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশাল সমুদ্র জয়ের পর এর অভ্যন্তরে কতো প্রকার মাছ আছে, কী সম্পদ আছে, প্রচলিত-অপ্রচলিত মাছ আছে—সেগুলো অনুসন্ধান করার জন্য আমাদের মীন সন্ধানী জাহাজ কাজ করছে।’
‘বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রচলিত-অপ্রচলিত বিশাল মৎস্য ভাণ্ডার রয়েছে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই মৎস্যসম্পদ এক সময় আমাদের বড় ধরনের আয়ের উৎস হতে পারে। সে জায়গায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তরসমূহ কাজ করছে।’
মাছ রপ্তানির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে থেকেই ইলিশ আমাদের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য ছিল। ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নতুন সংযুক্ত হয়েছে আমাদের বাগদা চিংড়ি। বিশ্বপরিমণ্ডলে বাগদা এখন বাংলাদেশের হিসেবে পরিচিত। এটি বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে।’