চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ
চাল আমদানি করতে আর ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমতি দেবে না সরকার। উপরন্তু যারা চাল আমদানি করতে আগ্রহী তাদের ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হবে। চাল আমদানি বন্ধের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে দেশের বাজারে ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই দেশে চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।
গত ১০ মে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অষ্টম বৈঠকেও চাল আমদানিতে এলসি বন্ধের সুপারিশ করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা গত বৈঠকে আমদানির ওপর কর (ট্যাক্স) বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ করেছি। আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি- যেহেতু আমাদের হাতে মজুদ আছে তাই আমরা আমদানির সুযোগ দেব না। কৃষকরা যাতে বিপর্যস্ত না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছি।’
শুল্ক আরোপের বিষয়ে মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়ে এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী বলে দিয়েছেন।’
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে থেকে জানা যায়, কমিটিতে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘দেশে কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য এরই মধ্যে ক্রয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, চাল আমদানির জন্য আর নতুন করে এলসি খোলার অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে যাঁরা চাল আমদানি করার জন্য আগ্রহী তাঁদের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।’
এ ছাড়া ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সুপারিশ করেন, ‘বর্তমানে দেশের বাজারে ধানের দাম কম মনে হচ্ছে। তাই দেশের কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য আমদানিকৃত চালের ওপর শুল্ক বাড়ানো এবং সরকার কর্তৃক ধানের দাম আরো বৃদ্ধি করে আরো বেশি পরিমাণে ধান সংগ্রহ করতে হবে।’
কমিটির আরেক সদস্য আব্দুল মান্নান কমিটিকে বলেন, ‘সরকার কর্তৃক চাল আমদানির ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের অভিহিত করা হলে কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের ‘কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র নবম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন সভাপতিত্ব করেন।
তবে এই বৈঠকে চাল আমদানির বিষয়টি আওতাভুক্ত না হলেও এই চাল আমদানিতে এলসি বন্ধ ও শুল্ক আরোপের বিষয়ে কমিটির আগামী বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন।
আজকের বৈঠকে ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়নাধীন সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা, কৃষি উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ শীর্ষক প্রকল্প, কন্দাল ফসল উন্নয়ন-দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প এবং কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণে বা বিপণন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ভূমিকা সস্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে আলু বীজ সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন দেশে আলু রপ্তানি নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটি বৈঠকে চাহিদার সাথে সম্পৃক্ত রেখে কৃষি গবেষণা পরিচালনা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রকল্প স্থায়ী কমিটিকে মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিদর্শনের ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে।
কমিটি কৃষি বিপণনের জন্য ল্যান্ডিং প্লেস নির্মাণের এবং বিভিন্ন প্রকল্পে পিডি নিয়োগে যে নীতিমালা রয়েছে, তা আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে।
কমিটির সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, মো. মামুনুর রশিদ কিরণ, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, মো. নুরুল ইসলাম ওমর ও অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।