ছাত্রলীগের হাতে আটক, নির্যাতন-বিয়ের পর মুক্তি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে আসা এক যুবককে চাঁদার দাবিতে প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই যুবক অভিযোগ করেন, রাজশাহী কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে তাঁকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
নির্যাতনের শিকার জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নওগাঁর জেলার পরশা থানায়। তিনি ঢাকার আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (সম্মান) শেষ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় ২০ ঘণ্টা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে তাঁকে আটকে রাখে ছাত্রলীগকর্মীরা। সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মুক্ত হন জাহাঙ্গীর।
জাহাঙ্গীর ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শনিবার জাহাঙ্গীর রাজশাহীতে বেড়াতে যান। বিকেলে রাজশাহী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত পূর্ব পরিচিত এক মেয়ের সঙ্গে জাহাঙ্গীর শহরের পদ্মার পারে ঘুরতে যান।
জাহাঙ্গীর দাবি করেন, একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়। তখন তিনি মেয়েটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান। সন্ধ্যায় ওই মেয়ের বন্ধু ও রাজশাহী কলেজের ছাত্রলীগকর্মী কাফী ও তাঁর সহযোগীরা শহরের একটি ছাত্রাবাস থেকে জাহাঙ্গীরকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাবিবুর রহমান হলের মাঠে ধরে নিয়ে যান। এ সময় রাজশাহী কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী কাফী, ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক কমিটির সহসভাপতি আয়াতুল্লাহ বেহেশতি, বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমেদ কৌশিক, সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ছাত্রলীগকর্মী এরশাদুর রহমান রিফাত, তরিকুল ও রানা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ওই মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিতে চান।
জাহাঙ্গীর দাবি করেন, এতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে অস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরে রাতে জোর করেই ওই মাঠে কাজী ডেকে উভয়ের বিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে মেয়েটিকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলে কৌশলে হলে আটকে রাখে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রলীগ ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে জাহাঙ্গীর হল থেকে চলে যেতে চাইলে তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হলের ২৪২ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়। এ সময় জাহাঙ্গীরের মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা ১০ হাজার টাকা উঠিয়ে ও বিভিন্নভাবে বিকাশের মাধ্যমে আরো ১০ হাজার টাকা নেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জাহাঙ্গীরের কাছে আরো ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাহাঙ্গীরকে একই হলের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী কাফী ও অন্য নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায়।
বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই হলে গিয়ে জাহাঙ্গীরের খোঁজ করেন। একপর্যায়ে একটি কক্ষের ভেতর থেকে শব্দ পেয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় জাহাঙ্গীরের হদিস পান সাংবাদিকরা। পরে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে মুক্ত হন জাহাঙ্গীর।
এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে আসে। ঘটনায় জড়িতরা এ সময় হলে অবস্থান করলেও কাউকে আটক করেনি পুলিশ।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আয়াতুল্লাহ বেহেশতি বলেন, ‘রাজশাহী কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে ওই ছেলে (জাহাঙ্গীরের) দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করে। তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও করেছে, কিন্তু বিয়ে করতে বলায় সে রাজি হচ্ছে না। ওই ছাত্রীর ও তাঁর বন্ধুদের অনুরোধে কয়েকজন তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। রাত হওয়ায় সে আমাদের সঙ্গে হলে ছিল। আজ (রোববার) সে আমাদের কাছ থেকে চলে গেছে। আমরা আর কিছু জানি না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহানুর রহমান শাকিল বলেন, ‘এ ঘটনায় ছাত্রলীগকর্মী সজীব, তরিকুল ও রিফাতকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, আয়াতুল্লাহ বেহেশতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহমেদ কৌশিককে বহিষ্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. তারিকুল হাসান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম বহিরাগত। গত রাতে (রবিবার) তাঁকে আমরার উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। আজ (সোমবার) ব্যস্ততার কারণে তদন্ত কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’