ইউপি কার্যালয়ে নারীকে ‘নগ্ন করে নির্যাতন’, গ্রেপ্তার ২
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জগন্নাথপুরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে এক নারীকে নগ্ন করে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী গত বুধবার রাতে সদর থানায় মামলা করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে সাতজনকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন- ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. রায়হান (আয়েন), ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান, কেদারনাথ রায় ও সংরক্ষিত নারী সদস্য মালেকা বেগম। এদের মধ্য রায়হান ও কেদারনাথকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ওই নারী ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সদর উপজেলাতেই তাঁর বাড়ি।
মামলার এজাহারে নির্যাতনের শিকার ওই নারী অভিযোগ করেন, গত ৮ মে রাতে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলালের নির্দেশে যুবলীগ নেতা রায়হান, ইউপি সদস্য আনিসুর বাড়ি থেকে ওই নারীকে তুলে নিয়ে যান। ইউপি সদস্য কেদারনাথ রায় ও সংরক্ষিত নারী সদস্য মালেকা বেগমও এতে নেতৃত্ব দেন।
ওই নারী অভিযোগ করেন, তাঁর একমাত্র সম্বল ভিটেবাড়ির ওপর চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন ও ইউপি সদস্য আনিসুরের চোখ পড়েছে। চেয়ারম্যান মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে চান। তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওই চেয়ারম্যান, তিন মেম্বারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পরিষদের কার্যালয়ে আমাকে নগ্ন করে নির্যাতন করেন। এ সময় দুই লাখ টাকা দাবি করে তারা। টাকা না দিলে বাড়ি ছাড়তে বলে। এ সময় মহিলা মেম্বার মালেকা আমাকে নগ্ন করে ইউনিয়ন পরিষদে মারধর করে। আর এই দৃশ্য দেখেন চেয়ারম্যান, মেম্বার আর সন্ত্রাসীরা।’
ওই নারীর মেয়ে বলেন, ‘মেম্বার এসে আমার আম্মুকে ডেকে বলে টিপসই দিতে হবে। তখন আমি বললাম কিসের টিপসই? কয় জনগণের জন্য টিপসই লাগবে। আমার আম্মুকে বাসা থেকে টেনে নিয়ে গেল। নিয়ে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ নেই, বেতাল মার দিতে শুরু করল। চেয়ারম্যান বলছে তাঁকে এক লাখ টাকা, আর মেম্বারকে এক লাখ টাকা দিতে হবে। তাইলে আমাদের এই বাসায় থাকতে দেবে, না হলে থাকতে দেবে না। এই জমিটার ওপর তাদের চোখ। আর কোনো কারণ নাই। তাঁরা বলে, হয় টাকা দাও না হয় জমি ছাড়ে চলে যাও, দেশ ছাড়ে যাও, কোথায় যাবা যাও।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউপি সদস্য ওই নারীকে বাড়ি থেকে টানতে টানতে পরিষদে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। মারধর করার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ইউপি সদস্য আনিসুর গিয়ে জমি তাঁদের দাবি করে ওই নারীকে পরিবারসহ বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় আনিসুর এক লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি জানান টাকা দিলে ওই পরিবারের সেখানে থাকতে কোনো সমস্যা নেই। অন্যথায় বাড়িটিতে তাঁদের থাকতে দেওয়া হবে না।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ইউপি সদস্য কেদারনাথ রায় বলেছিলেন, ‘সেদিন কী ঘটনা ঘটেছে তা আমি জানি না।’ এ সময় তিনি মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলাল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। পরিষদ ছেড়ে আমি সন্ধ্যার সময় চলে গেছি।’
চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয় লোকজন এক ব্যক্তিসহ ওই নারীকে ধরে নিয়ে পরিষদে আসে। তাঁর সঙ্গে ওই নারীর অবৈধ সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় লোকজন তাদের ধরে আনার সময় দু-একটা মারধর করে থাকতে পারে। তবে পরিষদে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন আলাউদ্দিন আলাল।
ইউনিয়ন যুবলীগের সম্পাদক আবদুল মজিদ আপেল বলেন, রায়হানের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁকে বহিষ্কার করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় তিন ইউপি সদস্যসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু মোহাম্মদ খায়রুল কবির বলেন, ‘ওই নারী কিছু জখম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাঁকে চিকিৎসা দিচ্ছি। তাঁর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।’ ওই নারীকে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।