মংলায় প্রথম শ্রেণির চষা ক্ষেত!
প্রথম শ্রেণির মংলা পোর্ট পৌরসভার প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়ক নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়েও শেষ হয়নি। সময় বাড়ানো হলেও কাজ চলছে ঢিমেতালে। ভাঙাচোরা কাদামাটির সড়ক পরিণত হয়েছে চাষযোগ্য ক্ষেতে। এ অবস্থায় টানা বর্ষণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরবাসী। সড়কের ভগ্ন দশার কারণে ব্যবসায়ীরা বিক্রিবাট্টা করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, বছর দেড়েক আগে প্রথম শ্রেণির মংলা পোর্ট পৌরসভা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়ক ও সড়কের পাশের নর্দমা কাম ফুটপাত নির্মাণে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়।
প্রকল্পগুলোর কাজ এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলার দরুন কাজ চলতে থাকে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এক বছরের নির্ধারিত সময় পার হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে অতিরিক্ত আরো তিন মাস সময় বর্ধিত করিয়ে নেয়। এরই মধ্যে এ অতিরিক্ত সময়ের এক মাস সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কাজ চলছে ধীরগতিতে যেনতেনভাবে। এ অবস্থায় বর্ধিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের প্রধান প্রধান সড়কের মধ্যে শেখ আবদুল হাই সড়ক, বিএলএস রোড, মাদ্রাসা রোড, শ্রমিক সংঘ সড়ক, হাজী বাহার উদ্দিন সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক সংলগ্ন নর্দমা কাম ফুটপাত নির্মাণকাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। এসব নির্মাণকাজ বর্ষার আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। এ অবস্থায় সড়কে চলাচলে দায় হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা।
সড়কের নানা জায়গায় নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে যত্রতত্রভাবে। সড়কের দুই পাশে নর্দমা কাম ফুটপাত পুরোপুরি নির্মাণ শেষ করা হয়নি। সড়কে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি করায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কগুলোতে কবে নাগাদ ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় বর্ষায় রাস্তায় পানি জমে চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। কাদার মধ্যে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রিকশা-ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন এমনকি সাইকেল পর্যন্ত চলাচলে ভোগান্তির শেষ থাকছে না। পথচারীসহ যানবাহন চালকদের প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। অফিসগামী লোকেরা কর্দমাক্ত রাস্তায় পড়ে গিয়ে নানাভাবে আহত হচ্ছেন। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো সড়কের মাঝে গর্তে আটকে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে। এতে ওই সব সড়কের অধিবাসীদের কষ্টের অন্ত থাকছে না।
মংলা পৌরসভা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের চরম খামখেয়ালিপনার কারণে বর্ষার আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। এ অবস্থায় শহরের যানবাহন চালক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরা পর্যন্ত চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এদিকে পুরো শহরের সড়কগুলোয় বেহাল দশার কারণে এর প্রভাব পড়েছে আসন্ন ঈদবাজারে। শহরের বাজার এলাকায় রাস্তার করুণ অবস্থার কারণে পোশাক, জুতাসহ বিভিন্ন দোকান ও টেইলার্সগুলোতে কোনো ক্রেতা ও অর্ডার নেই।
এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা এবারের ঈদবাজার নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
মংলা বন্দর বণিক সমিতির সভাপতি হাবিব মাস্টার এ ব্যাপারে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে সড়কের দুরবস্থায় এবারের ঈদে ব্যবসায়ীরা তেমন বিকিকিনি করতে পারছেন না। এতে ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের টাকার লোকসান গুনবেন।
মংলা নাগরিক সমাজের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নূর আলম পুরো শহরের যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঠিকাদারসহ পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে জনভোগান্তি এখন চরম আকার ধারণ করেছে। তিনি এ নির্মাণকাজে ব্যাপক স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র জুলফিকার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্ধিত সময়ের মধ্যেই যাতে নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করা হয়, তার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক তদারকি করছে। এর পরেও যদি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের জরিমানা গুনতে হবে।