নিয়োগ পেয়েও কর্মহীন দুই নারী শিক্ষক
নিয়োগপত্র পেয়েছেন। রোজ অফিসে হাজিরা দিচ্ছেন। মাস গেলে বেতনও নিচ্ছেন; কিন্তু তাঁদের কোনো কাজ নেই। এ দৃশ্য দেখা যাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন বিভাগে গেলে। এখানকার দুই শিক্ষক ড. শিল্পী রায় ও লোপা ইসলাম গত এক বছর কাজ না করেই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তর এবং বিভাগীয় প্রধানের মধ্যে চিঠি চালাচালিও হয়েছে, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। এর মধ্যে নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. আহসানুল কবীর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ড. শামীম মাহবুব গত বছর ২৬ জানুয়ারি উপাচার্য দপ্তর বরাবর দুজন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। কিন্তু পরে দুজন শিক্ষকের বিপরীতে চারজনকে বাছাই এবং নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়।
সে সময় স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় নিয়োগ বাণিজ্য-সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হলে নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের ১১ শিক্ষক স্বাক্ষর করে নিয়োগ বাণিজ্য ও অতিরিক্ত নিয়োগের জন্য সব সিন্ডিকেট সদস্য এবং উপাচার্য বরাবর প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিয়োগ বাণিজ্য-সংক্রান্ত পত্রিকার খবরের প্রতিবাদ করতে অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে সে সময় সিন্ডিকেট সভা চলার সময় এই ডিসিপ্লিনের সব শিক্ষক সভাকক্ষের সামনে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ডিসিপ্লিনের শিক্ষকদের এই মতামত উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাঁদের যোগদান অনুমোদন করে। সূত্র জানায়, এ সময় নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনে নিয়োগ পাওয়া চারজন শিক্ষকের ক্রমিক সংখ্যা অনুযায়ী প্রথম দুজন শিক্ষককে শিক্ষা কার্যক্রম ও পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দিলেও ড. শিল্পী রায় ও লোপা ইসলামকে এ সুযোগ দেননি বিভাগের প্রধান। পাশাপাশি এ দুই শিক্ষকের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে শুরু করেন বিভাগের অন্য শিক্ষকরাও।
এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার টিপু সুলতান জানান, অতীতেও এ ধরনের দুজনের সুপারিশের বিপরীতে চার-পাঁচজন নিয়োগ হয়েছে। তিনি জানান, নিয়োগ বিষয়টি একমাত্র উপাচার্যের দপ্তরের এখতিয়ারভুক্ত।আলোচ্য এ দুই শিক্ষককে কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে দুই দফা নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. আহসানুল কবিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সন্তোষজনক কোনো জবাব দেননি।
টিপু সুলতান আরো বলেন, নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রধান ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে যে পদত্যাগ করেছেন, সে ব্যাপারে উপাচার্য ঢাকা থেকে ফিরলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিভাগীয় প্রধান অতিরিক্ত দুজন শিক্ষককে কোনো বসার জায়গা না দিয়ে বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রেখে অমানবিক আচরণ করেছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নিয়োগ পাওয়ার পর গত বছর ২২ ও ২৩ জুন ড. শিল্পী রায় ও লোপা ইসলাম নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনে যোগদান করেন। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারায় তাঁরা মানসিক অস্বস্তিতে রয়েছেন বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে একাডেমিক ভবন-১-এর নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের ১৪৩৪ নম্বর কক্ষে এ দুই শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। এ সময় ড. শিল্পী রায় জানান, ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কাছে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করেছেন তাঁরা। ডিসিপ্লিনের কোনো কাজে তাঁদের ডাকা হয় না, বিভাগের প্রধানের কক্ষে তাঁদের প্রবেশাধিকার নেই বলে অভিযোগ করেন দুই শিক্ষক।
যে কক্ষটিতে তাঁরা এখন বসেন, সেটি ড. শিল্পী রায়ের স্বামী ড. তানজিন শওকতের। তাঁদের এই কক্ষ ব্যবহার করতে দেওয়ায় ড. তানজিন শওকতকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন বিভাগের প্রধান।
ড. শিল্পী রায় ও লোপা ইসলাম জানান, এই কক্ষ ছাড়া লাইব্রেরি আর ক্যাফেটেরিয়ায় প্রতিদিন সময় পার করেন তাঁরা।
দুই শিক্ষক জানান, সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তাঁরা এমনিতেই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। মেধা ও যোগ্যতার বিচারে তাঁদের নিয়োগ হয়েছে বলেও দাবি করেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. আহসানুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে, এ দুই শিক্ষকের নিয়োগের সময় নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে কয়েকটি সংবাদপত্রে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, রহস্যজনক কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার কোনো প্রতিবাদ করেননি। বিষয়টি নিয়ে এখনো চাপা উত্তেজনা রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে। আবার নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
তবে নিয়োগ পাওয়া এ দুই শিক্ষকের মধ্যে একজনের বাড়ি প্রভাবশালী এলাকায় হওয়ায় তাঁর বিষয়ে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন সবাই। এঁদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী এক শিক্ষকের স্ত্রীর বান্ধবী হওয়ায় উপাচার্য তাঁকে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।