ঈদে আকাশপথেও চাপ!
ঈদ উপলক্ষে আকাশপথেও বেড়েছে যাত্রীর চাপ। আর এ কারণে দেশীয় উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাগুলো অভ্যন্তরীণ রুটে বাড়িয়েছে আসন সক্ষমতা ও ফ্লাইটের সংখ্যা। এরই মধ্যেই অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিশেষ ঈদ ছাড়ও ঘোষণা করেছে। ঈদে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের পাশাপাশি কয়েক বছরে আকাশপথকেও বেছে নিচ্ছে দেশের সচ্ছল পরিবারগুলো।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) খান মোশাররফ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে যশোর, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে বিমানের বাড়তি ভাড়া কমেছে। এ ছাড়া বিমানের সকল অভ্যন্তরীণ রুটে ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমানেণে কমানো হয়েছে।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যাত্রীদের বাড়তি চাপ মোকাবিলায় আগামী ১৫ জুলাই যশোর, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে বিশেষ অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। হ্রাসকৃত ভাড়ার এই কর্মসূচি আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘ঈদে ঢাকা থেকে যে কোনো অভ্যন্তরীণ রুটে সময়ভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা হ্রাসকৃত ভাড়ায় ভ্রমণ করা যাবে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ যে কোনো রুট থেকে ঢাকা আসতে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া কমানো হয়েছে। এ ছাড়া লন্ডন থেকে আসা সিলেট-ঢাকা বিজি-৬০৭ ফ্লাইট-এ প্রতি শনিবার ট্যাক্সসহ মাত্র দুই হাজার টাকা এবং মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিবার বিজি-৬০৫ ফ্লাইট-এ ট্যাক্সসহ মাত্র দুই হাজার ৫০০ টাকায় ভ্রমণ করা যাবে। ঈদ উপলক্ষে ঘোষিত উপরোক্ত ‘ডিসকাউন্ট ফেয়ার’ আগামী ৩১ জুলাই, ২০১৫ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ‘বিশেষ ঈদ অফার’ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বিমানের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উপমহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ যশোর ও সৈয়দপুর রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালানোর সিদ্বান্ত নিয়েছে। আগামী ১৫ ও ১৬ জুলাই পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইটের অতিরিক্ত আরো দুটি ফ্লাইট চলাচল করবে।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ১৫ জুলাই ঢাকা থেকে সৈয়দপুরের নির্দিষ্ট ফ্লাইটের অতিরিক্ত ফ্লাইটটি দুপুর ৩টা এবং ঢাকা থেকে যশোরের অতিরিক্ত ফ্লাইটটি দুপুর ২টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া ১৬ জুলাই ঢাকা থেকে সৈয়দপুরের অতিরিক্ত ফ্লাইটটি দুপুর ২টা এবং ঢাকা থেকে যশোরের অতিরিক্ত ফ্লাইটটি বিকেল ৫টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে।’
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যে অতিরিক্ত ফ্লাইট দিয়েছিলাম, সেগুলোর টিকেট বিক্রি শেষ। এর মধ্যে যশোর এবং সৈয়দপুর প্রায় শেষ। একটা ফ্লাইটে কয়েকটা সিট খালি আছে। কক্সবাজার নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে ফ্লাইটে ও চট্টগ্রাম রুটে সকল সিট বিক্রি শেষ। ঈদ শেষে যারা ২০ বা ২১ তারিখ ঢাকা আসবেন সেগুলোর ফিরতি টিকেটও শেষ প্রায়।
যশোর এবং সৈয়দপুরে আগামী ১৫, ১৬ ও ১৭ জুলাই নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্লাইট দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এগুলোর ভাড়াও যথারীতি সারা বছর যে মূল্যে বিক্রি হচ্ছে, সেই মূল্যই রয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য ঈদ দিন কক্সবাজারে একটি ফ্লাইট রাখা হয়েছে। ২০, ২১ ও ২২ তারিখের ফ্লাইটগুলোর টিকেট শেষের দিকে রয়েছে।
ঈদে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের অবস্থা জানিয়ে কামরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা কুয়ালালামপুর ফ্লাইটে খুব ব্যস্ততা দেখছি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ যাত্রী বেড়েছে। তবে এই রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট দেওয়া হবে না। এ ছাড়া ঈদের ছুটিতে অনেকে কলকাতায় যান, ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এই রুটে যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে।’
ঈদ উপলক্ষে যশোর ও সৈয়দপুর থেকে ঢাকামুখী এবং এ ছাড়া ঈদ-পরবর্তী ঢাকা থেকে যশোর ও সৈয়দপুরমুখী যাত্রীদের সুবিধার জন্য সর্বনিম্ন ২৫০০ টাকা ভাড়ায় ভ্রমণ সুবিধা প্রদান করছে বলেও জানান কামরুল ইসলাম।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের হটলাইন সেলস আউটলেটের মাহাদী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে অভ্যন্তরীণ রুটে আমাদের এখন খুব ব্যস্ততা চলছে। কম দামের সকল আসনের টিকেট শেষ। এখন রয়েছে বেশি ভাড়ার কয়েকটি আসন। সারা দেশে ঈদ উপলক্ষে আমাদের এখন প্রতিদিন ২২টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। যশোর, রাজশাহী, বরিশাল ও সৈয়দপুর রুটে যাত্রীসংখ্যা বেশি। এই রুটগুলোতে এরই মধ্যে অতিরিক্ত ফ্লাইট দেওয়া হয়েছে। তবে সেগুলোরও টিকেট প্রায় শেষ। এ ছাড়া বরিশাল ও রাজশাহী রুটে আগামী ১৮ তারিখ পর্যন্ত কোনো টিকেট নেই। অন্যান্য রুটেও শেষ পর্যায়ে।’
এদিকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী আশিস কুমার রায় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে আগামী বুধবার ১৫ জুলাই ঈদের ছুটির আগের দিন ভিড়টা খুব বেশি। ওই দিনের ছোট এয়ারক্রাফটে আসন বিক্রি হয়ে গেছে। তাই আমরা ১২৪ আসনের ৭৩৭ বোয়িং একটি উড়োজাহাজ দিয়েছি। ফলে ওই দিন ২৫০ জন যাত্রী শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ভ্রমণ করবেন।’
ঈদে আন্তর্জাতিক রুটের চাপ সম্পর্কে আশীষ কুমার বলেন, ‘আগে নেপালে খুব বেশি ভিড় থাকতো। তবে ভূমিকম্পের পর সেই চাপটি এবার নেই। তবে কুয়ালালামপুর ও ব্যাংকক রুটে ভিড় খুব বেশি। আগামী বুধবার থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকক ফ্লাইটে যাওয়া-আসার কোনো ফ্লাইট নেই। তবে ব্যাংকক থেকে আসার জন্য ঈদের আগে ১৮ ও ১৯ তারিখ পর্যন্ত এখনো কিছু চেয়ার খালি রয়েছে। তবে ২০ তারিখ থেকে কোনো চেয়ার নেই। আর কুয়ালালামপুর ফ্লাইটে ৭০ শতাংশ ও সিঙ্গাপুর রুটের ফ্লাইটে ৭৫ শতাংশ যাত্রী রয়েছে।’
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে আকাশপথে ভ্রমণে টিকেটের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় টিকেট বিক্রি করছে। কিন্তু ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ ও কেনাকাটা করতে যেসব সচ্ছল পরিবার দেশের বাইরে যায় এসব যাত্রীদের লক্ষ্য করেই এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো নানা রকম ছাড় দিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। জাতীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও ঈদকে সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ রুটে ছাড় ঘোষণা করেছে।
তবে এসব বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) ড. আবদুল মোমেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঈদে যাত্রীদের একটা বাড়তি চাপ থাকে। এই সময় চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যে টান পড়ে।’
আবদুল মোমেন আরো বলেন, ‘ঈদের সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এয়ারলাইনসগুলো যদি ১০ হাজার টাকা ভাড়া দাবি করলেও যাত্রীরা ভ্রমণ করেন। কারণ প্লেনের যাত্রীদের সামর্থ্য আছে।’ তবে এয়ারলাইনসগুলো বেশি ভাড়া যাতে নিতে না পারে তবে সে জন্য সরকারের তদারকি থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।