ঈদ উপলক্ষে নৌপারাপারে বাড়তি ফেরি
সড়ক ও রেল পথের মতো ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্নে ফেরি পারাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে বাড়তি ফেরি ও লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে ঘাটে। আগামী ১৪ জুলাই থেকে বাড়তি ফেরিতে পারাপার শুরু হবে।
গতকাল শুক্রবার বিআইডাব্লিউটিসি আরিচাঘাটের এজিএম মো. জিল্লুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সমন্বয়ে ফেরিঘাট ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত চাপ সামলানোর পাশাপাশি নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে যাত্রী পারাপারের জন্য ওই কমিটি বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে।
অতিরিক্ত ফেরি চলাচল বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা ঘাটের এজিএম মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিসি এবার ১৮টি ফেরি নিযুক্ত করবে। এ ১৮টি ফেরি দিয়ে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষগুলোকে নির্বিঘ্নে, স্বচ্ছন্দে, নিরাপদে ও দ্রুত পার করার ব্যবস্থা করা হবে। এর আগে ১৪টি-১৫টি ফেরি দিয়ে আমরা অপারেশন পরিচালনা করতাম। ঈদ উপলক্ষে আমরা আরো চার-পাঁচটি ফেরি নিয়োজিত করেছি। ২৬ রোজা থেকে যাত্রীর চাপ বাড়বে। সে সময়ই এ বাড়তি ফেরিগুলো বাস ও যাত্রী পারাপার শুরু করবে।’
তা ছাড়া ঘাট এলাকায় যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী লেন। আর ফেরিতে ছোট যানবাহন (প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস) পারাপারের জন্য আলাদা বাইপাস সড়কের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ঈদের তিন দিন আগ থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগলেও নাব্যতা সংকট না থাকায় পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না।
শাহ মখদুম ফেরির মাস্টার মো. হানিফ বলেন, ‘এবার চ্যানেল মোটামুটি ভালোই আছে, যদি দুর্যোগপূর্ণ কোনো আবহাওয়া না থাকে। আমাদের ঈদ প্রস্তুতিও ভালোই আছে, আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি আছে। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, যদি কোনো বৈরী প্রকৃতি না দেখা দেয় তবে ছয় থেকে সাত হাজার গাড়ি পার ডে আমরা পার করতে পারব।’
এ ছাড়া লঞ্চ পারাপারেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ১০টি অতিরিক্ত লঞ্চের সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত যাত্রী বহনে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।
এ বিষয়ে পাটুরিয়াঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম বলেন, ‘ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের জন্য লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে যাত্রীরা যাতে সুন্দর ভাবে নদী পার হতে পারে তার জন্য এখন যেভাবে আমাদের লঞ্চ চলে, প্রতিদিন আমরা ১০টা লঞ্চ রিজার্ভ রাখি, তখন যদি যাত্রীর চাপ বাড়ে তবে আমরা এ লঞ্চ প্লেস করে দেব।’
যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়ে আবদুর রহিম আরো বলেন, ‘যাত্রী পারাপারে আমরা যথেষ্ট সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছি। এখানে কোনো অসুবিধা হবে না। আশা করি যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরে যেতে পারবে। আমাদের লঞ্চের সরঞ্জাম- গয়া বলেন, বালতি বলেন, সব কিছু সব লঞ্চে পর্যাপ্ত পরিমাণ, যেটা নিয়ম অনুসারে থাকার কথা ওটা আছে। আমরা ওভারলোডিং যাত্রী পার করব না, আগেও করি নাই, এবারও করব না।’
এদিকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ এখনো বাড়েনি পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। নির্বিঘ্নে ফেরি পার হতে পেরে খুশি যাত্রীরাও।
এ বিষয়ে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার যাত্রী সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সুরভী সুলতানা বলেন, ‘অনেক আগেই বাড়ি যাচ্ছি, এখনো যানজট বেশি নেই। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত সব কিছু ভালোই মনে হচ্ছে।’
অন্য যাত্রী আকতারুজ্জামান বলেন, ব্যবস্থা মোটামুটি ভালোই মনে হচ্ছে। আমরা সব সময় ঈদ-পার্বণে যাই তো তেমন কোনো সমস্যা হয় না। এবারও বাসে ওঠার পর ফেরি পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি।’
এদিকে, সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান জানান, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য পাটুরিয়া ঘাটে ৪০০ পুলিশ ছাড়াও কমিউনিটি পুলিশ, আনসার, রোভার স্কাউট নিয়োজিত থাকবে।
এ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল এবং ঘাটে গাড়ির সিরিয়াল সংক্রান্ত চাঁদাবাজির বিষয়েও শতর্ক থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ বিষয়ে কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না বলেও জানান এসপি মাহফুজুর রহমান।