উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক
উদ্বোধনের অপেক্ষায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বান্দরবানের থানছি-আলীকদম উপজেলা সড়ক। প্রায় আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কপথটি নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী। বান্দরবানের থানচি থেকে আলীকদম হয়ে এ সড়ক চলে গেছে সমুদ্র সৈকতের পর্যটন নগরী কক্সবাজারে।
আগামীকাল মঙ্গলবার টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই সড়ক উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং।
জেলা প্রশাসন জানায়, উদ্বোধনের পর দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়কপথটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সবুজ পাহাড়ের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা সড়কপথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে গাড়িতে ভ্রমণের সুযোগ দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আরেকধাপ এগিয়ে নেবে। সড়কটি ব্যবহার করে পর্যটকরা কক্সবাজার হয়ে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এ জন্য পর্যটকদের চট্টগ্রামের রাস্তা ব্যবহার করতে হবে না। ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)।
এ সড়কের ২২ কিলোমিটার পয়েন্টে আড়াই হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ার আকৃতি দেখতে অনেকটা ডিমের মতো হওয়ায় স্থানীয় লোকজন পাহাড়ের চূড়ার নাম দিয়েছেন ‘ডিম পাহাড়’। ডিম পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে চারপাশের সবুজ গাছগাছালি আর আকাশ-পাহাড় মিশে যাওয়ার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। সড়কটি চালু হওয়ায় ডিম পাহাড় একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হয়ে উঠবে।
আলীকদম উপজেলার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আকর্ষণীয় ডিম পাহাড়ের চূড়ায় গাড়ি চলাচল করবে এমনটি কোনোদিনও ভাবিনি। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়কের নিচে গড়ে উঠা ছোট্ট ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামগুলোকে শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা ছবির মতোই লাগে। সড়কটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এ অঞ্চলের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।’
প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রথমে থানছি-আলীকদম অভ্যন্তরীণ সড়কের নির্মাণকাজ আরম্ভ করেছিল। চার বছর সড়ক তৈরির কাজ করার পর ২০০১ সালে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল শাখা ১৭ ইসিবিকে সড়কটি হস্তান্তর করা হয়। ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৭ ইসিবি ১৮ কিলোমটিার পর্যন্ত সড়কটির নির্মাণকাজ করে। গত বছরের অক্টোবর থেকে সড়কটি সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবিকে দেওয়া হয়। তারা থানচি থেকে আলীকদম পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ সড়কটি দুই কিলোমিটার কমিয়ে ৩৩ কিলোমিটারে নিয়ে আসে। বর্তমানে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
থানচি-আলীকদম অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনোয়ারুল ইসলাম জানান, দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়কপথটি তৈরি করতে প্রকল্প ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। গত ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ছয় মাসেই সড়কটির চেহারা পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কটি ৩০ থেকে ৩৫ ফুট চওড়া করা হয়েছে। বোঝাই যাবে না যে এত উঁচু পাহাড়ের ওপর দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটি শুধু থানচি থেকে আলীকদমের দূরত্বই কমিয়েছে তা নয়, পর্যটন শিল্পের আরো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখানকার পিছিয়ে থাকা মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।’
মনোয়ারুল ইসলাম আরো জানান, কক্সবাজার জেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সড়কটি দুটি ধাপে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে থানচি থেকে আলীকদম অংশের কাজটি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় অংশ ছাড়াই আলীকদম থেকে চকরিয়া সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে কক্সবাজার যাওয়া যাচ্ছে। তবে আলীকদম থেকে বাইশারি-চাকঢালা-ঘুমধুম-উখিয়া অংশের কাজ শেষ হলে পথের দূরত্ব অনেক কমে যাবে।