পাসপোর্ট করতে পুলিশি ছাড়পত্রের বিধান বাদ দেওয়ার সুপারিশ
পাসপোর্ট অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতি আর দালালদের কারণে ৫৫ ভাগ মানুষ অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। আর যেসব ক্ষেত্রে হয়রারি হতে হয় সেগুলো হলো আবেদনপত্র উত্তোলন, আবেদনপত্র জমা, প্রি-এনরোলমেন্ট, বায়ো-এনরোলমেন্ট, পাসপোর্ট বিতরণ ও দালালের সঙ্গে চুক্তি।
আজ সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত টিআইবি পাসপোর্ট অফিসভিত্তিক এই গবেষণা কার্যক্রম চালায়। প্রতিটি বিভাগে জেলা পর্যায়ে মোট এক হাজার ৪৫৩ জন মানুষ জরিপে অংশ নেয়।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে সেবাগ্রহিতারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয় পুলিশি ছাড়পত্র নিতে গিয়ে। পুলিশি তদন্তে সেবাগ্রহিতাদের ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে এবং ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ সেবাগ্রহিতাকে পুলিশকে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়েছে বলে তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে।
পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) সেবাগ্রহিতার আবেদনপত্রে অযথা ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এসবি সদস্যদের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রম বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো, বাড়িতে না এসে চায়ের দোকান বা থানায় ডেকে পাঠানো, নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ বা ঘুষ দাবি করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা বিকাশে পাঠাতে বলার মাধ্যমে আবেদনকারীদের হয়রানি করার বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
এসব হয়রানি ও দুর্নীতির কারণে পাসপোর্ট করতে পুলিশি ছাড়পত্রের বিধান বাদ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল। আজ টিআইবির ধানমণ্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই মত দেন তিনি।
পাসপোর্ট বিতরণে অফিস নির্ধারিত সময়ের পর গড়ে ১২ দিন, সর্বোচ্চ ৪৪.৮ দিন এবং সর্বনিম্ন ৪.৪ দিন দেরি হয় বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের প্রায় সব পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে ও বাইরে দালালের উপস্থিতি লক্ষণীয়। দালালদের একাংশ এসবি পুলিশ এবং পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। দালালদের একাংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তাদের দৌরাত্ম্য বজায় রাখে।
দালালদের সহযোগিতা নিয়েছে এমন সেবাগ্রহিতাদের ২১.৬ শতাংশ বলেছে যে, দালালের সহযোগিতা না নিলে কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্র জমা নেয় না।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি পাসপোর্ট সেবায় ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন সাধিত হলেও সেবার মান এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। পাসপোর্ট অফিসগুলোতে দালালচক্র এখনো সক্রিয়। এ ছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং আবেদন ফরম সত্যায়ন করতে সেবাগ্রহিতারা হয়রানির শিকার হচ্ছে।’
কোনো প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ভেরিফিকেশন ও আবেদনপত্র সত্যায়নের নিয়ম চালু রেখে সেবাগ্রহিতাদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি এ নিয়ম দুটি বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এর বদলে সব নাগরিকের জন্য ‘বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক’ এবং ‘অপরাধী তথ্য ভাণ্ডার’ তৈরি করে তার সঙ্গে পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সংযোগ স্থাপন করার সুপারিশ করেছে টিআইবি।
‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত সুপারিশ উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহনূর রহমান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।