‘বড় বড়’ মামলায় ‘গরম’ হচ্ছে আদালত
ঈদের ছুটি শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার শুনানি এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর চূড়ান্ত রায় ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠবে আদালত অঙ্গন। উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে দেশের রাজনৈতিক ময়দানও।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীকে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের দিন আগামী ২৯ জুলাই নির্ধারণ রয়েছে। একই সঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের আপিল বিভাগের ফাঁসির দণ্ডের রায় হতে পারে যেকোনো সময়। এরপরই তাঁর রিভিউ আবেদন এবং ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।
খালেদা জিয়ার ছয় মামলা
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানির নির্ধারিত দিন ২৩ জুলাই। ওই দিন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে পারেন। বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে মামলা দুটির শুনানি চলছে। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। এর আগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে প্রথম মামলা করে দুদক।
উচ্চ আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতির মামলা বাতিল করতে জারি করা রুলের শুনানি চলছে। এ ছাড়া গত ১৯ জুন নাইকো মামলার রুল বাতিল করে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন আদালত। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা করে দুদক। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা করা হয়। এসব মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া রিট করলে মামলা বাতিলে আদালত রুল জারি করেন।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আপিলের চূড়ান্ত রায়
মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় আগামী ২৯ জুলাই ঘোষণা করা হবে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হবে। গত ৩০ মে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের শুনানি শুরু হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁর বিরুদ্ধে আনা ২৩ অভিযোগের মধ্যে ১৭টিতে সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে নয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। আটটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয়টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো প্রমাণ হাজির না করায় ওই সব অভিযোগ থেকেও তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। প্রমাণিত নয়টি অভিযোগের মধ্যে গণহত্যার চারটি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এগুলো হলো রাউজানের মধ্যগহিরা, জগৎমল্লপাড়া, রাউজানের ঊনসত্তরপাড়া ও শাকপুরা গ্রামে গণহত্যা। সালাউদ্দিন কাদেরকে তিনটি অভিযোগে ২০ বছর করে ৬০ বছর ও দুটি অভিযোগে পাঁচ বছর করে ১০ বছরসহ মোট ৭০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এসব অভিযোগ থেকে খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন এই বিএনপি নেতা। হরতালের আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এরপর ১৯ ডিসেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মুজাহিদের ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় গত ১৬ জুন বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। যেকোনো দিন এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশ বের হতে পারে। এরপরই শুরু হবে আসামিপক্ষের রিভিউ ও রাষ্ট্রপক্ষে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম।
আপিল বিভাগের রায়ের এ অনুলিপি যাবে ট্রাইব্যুনালে। এরপর ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। সেটা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি দেওয়া হবে মুজাহিদকে। এরপর রিভিউ আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন মুজাহিদ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হন মুজাহিদ। এ ঘটনায় ২০১১ সালের ২১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন কর্মকর্তারা। এরপর ২ আগস্ট তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ২০১২ সালের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।
আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় ১০ যুদ্ধাপরাধীর মামলা
ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত আরো ১০ যুদ্ধাপরাধীর মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব মামলায় সব আসামিকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী, আবুল কালাম আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈন উদ্দিন, জাহিদ হোসেন খোকন ও ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার।