‘মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে’
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ রোববার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে রায় নিয়ে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি অনুমান করছি এ রায় প্রকাশ হতে আরো দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। যেহেতু এবার আপিলের রায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে, সেহেতু একজন বিচারক রায় লিখবেন। অন্য বিচারপতিদের এখানে ভিন্নমত পোষণ করে রায় দেওয়ার সুযোগ নেই। আশা করছি আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে মুজাহিদের রায় পাব।’ রায় প্রকাশের পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গত ১৬ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর আপিল বিভাগের রায়ের অনুলিপি যাবে ট্রাইব্যুনালে। এরপর ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। সেটা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি দেওয়া হবে মুজাহিদকে। এরপর রিভিউ আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন আলবদরপ্রধান আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ।
গত ১৬ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা ৬ নম্বর অভিযোগ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী হত্যা-গণহত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তবে ১ নম্বর অভিযোগ অর্থাৎ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন হত্যার দায় থেকে মুজাহিদকে খালাস দেন আপিল বিভাগ, এই একই অভিযোগে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া ৭ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে গণহত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এর পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। ৫ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ এবং ৩ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি আভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশসহ বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত করেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া দুটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সেসব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আ্যডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। এ ছাড়া ২৫ পৃষ্ঠার লিখিত যুক্তিও আদালতে দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সংগঠন আলবদরের প্রধান ছিলেন মুজাহিদ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
মুজাহিদের আপিল শুনানিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায় ও মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) পাঠ শেষ করে আসামিপক্ষ। এরপর গত ২৫, ২৬ ও ২৭ মে মোট তিন কার্যদিবস আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে মামলায় যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়।
গত ২৭ মে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন রায়ের জন্য ১৬ জুন চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে বলে দিন ধার্য করা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। এ ঘটনায় ২০১১ সালের ২১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন কর্মকর্তারা।
এর পর ২ আগস্ট তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ২০১২ সালের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।