‘টাকা যা চাইতাছে দিয়া দেন, নাইলে মাইরা ফেলবে’
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ২২ বছরের তরুণ মোহাম্মদ জনি। কৃষক বাবার পক্ষে সংসারের সব ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মাধ্যমিকের পর আর লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। কাজের খোঁজে ঢাকায় এসে ওঠেন চাচা মিজানুর রহমানের বাসায়।
ভালো কাজের আশায় দালালের মাধ্যমে জনিকে ইরাকে পাঠান মিজান। কিন্তু যাঁদের মাধ্যমে জনিকে বিদেশ পাঠালেন তাঁরা যে প্রতারক সেটা বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। ইরাকে যাওয়ার জন্য চার লাখ টাকা খরচ করা জনি এখন লিবিয়ায় অপহরণকারী চক্রের হাতে বন্দি। আরো দুই লাখ টাকা না দিলে মিলবে না মুক্তি।
লিবিয়া থেকে টেলিফোনে কাঁদতে কাঁদতে জনি তাঁর চাচাকে বলেন, ‘চাচা টাকা যা চাইতাছে দিয়া দেন, নাইলে আমারে মাইরা ফেলবে।’
রাজধানীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে এভাবেই নিজেদের প্রতারিত হওয়ার কথা বলছিলেন মিজানুর রহমান। ভাইয়ের ছেলে জনির বন্দিদশার বিষয়ে সাহায্য চাইতে পিবিআই কর্তৃপক্ষের আসে এসছেন তিনি। কারণ জানতে পেরেছেন যে তসলিম চক্রের মাধ্যমে জনিকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন সেই চক্রের চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআইয়ের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার আহসান হাবিব পলাশ জানান, পিবিআইয়ের অরগানাইজড ক্রাইম টিমের সদস্যরা একটি বিশেষ অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ থেকে মানবপাচার চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তসলিম উদ্দিন (৫০), মোফাজ্জেল হোসেন (৪৮), আইয়ুব আলী (৫২) ও আরমান সরকার (৪২)।
এরা বেশি বেতনে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের লিবিয়ায় পাঠাতেন বলে জানান আহসান হাবিব পলাশ। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর দেশটিতে অবস্থানকারী চক্রের অন্য সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে আটকে রেখে মারধর করে তাঁর পরিবারের কাছে মুক্তিপণের টাকা আদায় করত।
এ বিষয়ে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন আহসান হাবিব পলাশ। তিনি জানান, মো. হিরণ তালুকদার নামের এক ব্যক্তি গত বছর ২৪ ডিসেম্বর তাঁর ভাই সাদ্দাম হোসেনকে চক্রটির মাধ্যমে লিবিয়া পাঠান। সেখান পৌঁছানোর পর চক্রের সদস্যরা সাদ্দাম হোসেনকে আটকে রেখে পরিবারের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে।
পরে হিরণ পিবিআইয়ের কাছে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে পিবিআই। পরে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া পিবিআইয়ের প্রচেষ্টায় লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সাদ্দাম হোসেনকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়।