গাড়িতে জাতীয় পতাকা নিয়ে তোপের মুখে এমপি সেলিনা
নিয়মনীতি ভঙ্গ করে নিজের গাড়িতে জাতীয় পতাকা বহন করে জাতীয় শোক দিবসে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে তোপের মুখে পড়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের (মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা) সংসদ সদস্য সেলিনা আকতার বানু। পরে অবশ্য জনতার ক্ষোভের মুখে তিনি পতাকা নামিয়ে ফেলতে বাধ্য হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধুর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সদস্য সেলিনা আকতার বানু নিজ গাড়িতে জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রথমে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা ও পরে জেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতে অংশ নেন।
পতাকাবাহী গাড়ি দেখে অনেকেই ধারণা করছিল, হয়তো শোক দিবসে কোনো মন্ত্রী এসেছেন। ফলে প্রশাসনও ছিল তৎপর। কিন্তু ওই গাড়ি থেকে সংসদ সদস্য সেলিনা আকতার নেমে এলে সবাই হতবাক হয়ে পড়েন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য সেলিনা আকতার বানু বলেন, ‘গাড়িতে যেসব কর্মী ছিলেন তারাই পতাকা লাগিয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় সেটি খুলে ফেলা হয়েছে। আমার অজান্তেই কর্মীরা পতাকা লাগিয়েছিল।’
জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধিতে বলা হয়েছে, ‘ইচ্ছা করলেই যে কেউ গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মোটরগাড়ি, নৌযানে ও বিমানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের অধিকারী। তা ছাড়া আইনানুযায়ী জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, কেবিনেট মন্ত্রী, কেবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, চিপ হুইপ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতি, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন বা কনস্যুলার মিশনের প্রধান তাঁদের মোটরগাড়ি ও নৌযানে পতাকা উত্তোলনের অধিকারী। প্রতিমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ও উপমন্ত্রী রাজধানীর বাইরে ভ্রমণকালে কিংবা বহির্বিশ্বে মোটরগাড়ি অথবা জলযানে পতাকা ব্যবহার করার অধিকারী হবেন।’
প্র্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে নিজের গাড়িতে জাতীয় পতাকা বহন করে সংসদ সদস্য সেলিনা আকতার বানু গাংনী উপজেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতে অংশ নেন। তখন অনেকেই বিষয়টি সেভাবে খেয়াল করেননি। উপজেলার কর্মসূচি শেষে তিনি পতাকাবাহী গাড়িযোগে মেহেরপুরে চলে যান।
জেলা প্রশাসন আয়োজিত একটি শোকর্যালি শহীদ সামসুজ্জোহা পার্ক থেকে শুরু হয়। র্যালিতে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন, জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার হামিদুল আলমসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এতে সংসদ সদস্য সেলিনা আকতার বানুও অংশ নেন।
র্যালিটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। র্যালির পেছন পেছন সংসদ সদস্যের পতাকাবাহী গাড়িটি যেতে দেখে জনমনে নানা প্রশ্ন এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজনের নানা সমালোচনা ও তোপের মুখে অবশেষে গাড়ি থেকে পতাকাটি খুলে ফেলেন ওই গাড়ির চালক।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন বলেন, ‘যদি তিনি সজ্ঞানে জাতীয় পতাকা তুলে থাকেন তা দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। যদি ভুলে তুলে থাকেন সে ক্ষেত্রে বলার কিছু নেই।’
গাংনীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল আমিন জানান, সংসদ সদস্য সেলিনা আকতার বানু তাঁর গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করেছেন কি না তাঁর জানা নেই।