বিচার চাওয়ায় শিক্ষককে পুলিশের গলাধাক্কা!
দেড় থেকে দুই শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে হাতে হাত রেখে শিশু হত্যার বিচার চাইতে এসেছিল। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাদের মানববন্ধন পণ্ড হয়ে গেছে। লাঞ্ছিত হয়েছে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
urgentPhoto
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুরের মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের দাবিতে এ এইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মানববন্ধনে দাঁড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে সদর থানার উপপরিদর্শক শ্যামলেন্দু ঘোষ গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ গাউস উর রহমানের হাত থেকে টেনে-হিঁচড়ে ব্যানার কেড়ে নেন। শিশুদের সামনেই শিক্ষক গাউস উর রহমানকে ঘাড়ে ধরে ধাক্কা দিয়ে নিজেদের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে পুলিশ। এ এইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্য শিক্ষকদের বাধার মুখে গাউস উর রহমানকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানববন্ধন করতে পারেনি শিশুরা।
অধ্যক্ষ গাউস উর রহমান বলেন, গত ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার মস্তফাপুর বহমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার ও হ্যাপি আক্তারকে নির্যাতনের পর হত্যা করে বখাটেরা। এ ঘটনাসহ ও সারা দেশে শিশু হত্যার বিচারের দাবিতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় সদর থানার উপপরিদর্শক শ্যামলেন্দু ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা অতর্কিতভাবে মানববন্ধনে বাধা দিয়ে ব্যানার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। এতে শিক্ষার্থী, নিহতের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ এ সময় তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই শ্যামলেন্দু ঘোষ বলেন, ‘সদর থানা থেকে কোনো অনুমতি না নেওয়ায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অনুমতি নিয়ে এলে তারা মানববন্ধন করতে পারে। অধ্যক্ষকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। শুধু তাঁকে মানববন্ধন না করতে বলেছি।’
এদিকে জেলা পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুই স্কুলছাত্রী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। কেউ মানববন্ধন বা অন্য কর্মসূচি নিতে চাইলে অবশ্যই পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। ওই স্কুল অ্যান্ড কলেজের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাদের জানায়নি। তাই তাদের মানববন্ধন করতে দেওয়া হয়নি। তবে অনুমতি চাইলে, বিষয়টি ভেবে দেখা যাবে। ক্ষেত্রে বিশেষ আমরা তাদের পাহারারও ব্যবস্থা নিব।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পারভেজ রায়হান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কেউ শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করলে পুলিশ বাধা দিতে পারে না। তা ছাড়া বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। দুজন শিক্ষার্থীকে নৃংশসভাবে হত্যা করা হলো, সেই হত্যার বিচার দাবি করা দোষের নয়। আমরা পুলিশের বিষয়টি শুনেছি। জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’