ভাষাসৈনিক ওয়াজউদ্দিন মাস্টার আর নেই
ভাষাসৈনিক মো. ওয়াজউদ্দিন মাস্টার (৮১) আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বার্ধক্যজনিত রোগে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড় পয়লা গ্রামের নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন ওয়াজউদ্দিন। কয়েক দিন আগে তাঁর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান। এরই মধ্যে আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ওয়াজউদ্দিন স্ত্রী, সাত ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বড় পয়লা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে।
ওয়াজউদ্দিনের নাতি শাহিনুর রহমান জানান, ১৯৩৪ সালের ১ মার্চ বড় পয়লা গ্রামের বাহার উদ্দিন ও দুলা বেগমের ঘরে জন্ম নেন ওয়াজউদ্দিন। তিনি ছিলেন দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড়। বাড়ির কাছে তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৫২ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি।
১৯৪৯ সালে ওয়াজউদ্দিন যখন নবম শ্রেণির ছাত্র, তখন ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’র দাবিতে আন্দোলন করার জন্য ঢাকা থেকে লিফলেট যায় ওই ইনস্টিটিউটে। লিফলেট হাতে পেয়ে ওয়াজউদ্দিন সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। ইনস্টিটিউটের সামনে তাঁরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় ওয়াজউদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মানিকগঞ্জ কারাগারে ১৬ দিন রাখার পর তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি আরো ১৮ দিন থাকেন। ৩৪ দিন কারাভোগের পর তিনি জামিনে এসে আবার ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন। আন্দোলনে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫৭ সালে ওয়াজউদ্দিন শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। প্রথমে তিনি শ্রীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ওই বছর তিনি পার্শ্ববর্তী বোলতলা গ্রামের দুলা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের দাম্পত্য জীবনে সাত ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। ছেলেদের মধ্যে চারজন সরকারি চাকরি, একজন শিক্ষকতা ও দুজন ব্যবসা করেন। ১৯৯২ সালে তিনি তেরশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে অবসর গ্রহণ করেন।
শিক্ষকতা পেশার কারণে ওয়াজউদ্দিন সবার কাছে পরিচিত হন ‘ওয়াজউদ্দিন মাস্টার’ নামে। তিনি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।