সব ক্ষমতার মালিক জনগণ হতে পারেনি : এ বি এম খায়রুল হক
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধানে দেশের সব ক্ষমতার মালিক জনগণকে করা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সরকারের যারা আছে তারা সবাই জনগণের সেবক। কিন্তু এখনো আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের সেবক হতে পারেননি। জনগণকে সব ক্ষমতার মালিক হিসেবে মেনে নিতে পারেননি এবং সংবিধান অনুযায়ী সব ক্ষমতার মালিক জনগণ হতে পারেনি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাতের ‘বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ বি এম খায়রুল হক এসব কথা বলেন।
খায়রুল হক বলেন, ‘মামলার বোঝা নিয়ে আমাদের আইনজীবীরা কাজ করছেন। এরপরেও সমালোচনা শুনতে হয়। আমাদের দেশে প্রতি এক লাখ ৫২ হাজার মানুষের জন্য একজন আইনজীবী রয়েছেন। অথচ আমেরিকায় প্রতি ২০ হাজারে একজন, ভারতে ৮০ হাজারে একজন আইনজীবী রয়েছেন। ভারত টার্গেট করেছে প্রতি ২০ হাজারে একজন আইনজীবী রাখার। অথচ আমাদের দেশে কোনো টার্গেটই নেই।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে তিনি আমাদের বাঙালির পরিচয় দিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আমাদের ঢাকা থেকে পাসপোর্ট দেওয়া হতো না। ঢাকায় স্কলারশিপের খবর আসত মাত্র একদিন আগে যাতে বাঙালি ছাত্ররা সেখানে আবেদন করতে না পারে। চাকরির অবস্থা ছিল আরো ভয়ংকর। সেই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তির কাণ্ডারি ছিলেন বঙ্গবন্ধু।’
খায়রুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাগরের মতো বিশাল মন ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি একসঙ্গে দুটি দেশের জন্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য তিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন। আর বাংলাদেশকে তিনি জন্ম দিয়েছেন। দুটি দেশ তৈরির নেতা পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান খায়রুল হক বলেন, ‘এক বছর আগে বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হওয়া একজন কীভাবে বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করা যায় তা নিয়ে ৩৫টি টিপস দিয়েছেন। সেখানে ১০ নম্বর টিপসে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ আর আন্তর্জাতিক বিষয় কম পড়লেও চলবে। এই হচ্ছে আমাদের দেশপ্রেম। আমরা মুখে আর বক্তব্যে দেশপ্রেমের কথা বলি কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন। দীর্ঘদিন ধরে পিএসসির জন্য মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলাদা পাঠ্যপুস্তকের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এটি খুবই লজ্জার।’
অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করা যাবে না। বাংলাদেশের কথা বলতে হলে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে হয়। তাঁকে সম্মান করতে হয়। যে মানুষটি জীবনের বেশির ভাগ সময়ই গণমানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জেলে কাটিয়েছেন; সারা জীবন দিনে শুধু তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন-এত কিছুর পরেও যে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করে না তাকে যে কী বলে ডাকব জানি না।’
মিজানুর রহমান আবুল বারকাতের বইয়ের প্রশংসা করে বলেন, বইটি আকারে ছোট হলেও এতে পুরো দেশের ইতিহাস রয়েছে। এতে অনেক অজানা তথ্য সংযোজন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল বারকাত প্রমুখ।