‘দেশে প্রতিবছর ১১ হাজার আত্মহত্যা’

বাংলাদেশে প্রতি বছর ১১ হাজার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১৭২ জন তাদের জীবন স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিচ্ছে। জাপানে এক সময় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটত খুব বেশি। গত ১০ বছরে তা কমে গেলেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা বাড়ছে।
আজ রোববার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম চৌধুরী। বাংলাদেশে জেনেটিক হারে আত্মহত্যা বেড়েই চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রবণতা রোধে বিভিন্ন কৌশল ও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবণতা থেকে আমাদের প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।
আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে আজ থেকে যাত্রা শুরু করল ‘অনীকদের জন্য উদ্যোগ’। প্লাটফর্মটির উদ্যোগে আগামীকাল ‘আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ‘অনীকদের জন্য উদ্যোগ’ সংগঠনটির আহ্বায়ক এনটিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সুভাষ চৌধুরী। তিনি তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালে সাতক্ষীরা জেলায় ৩৬৭টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ হিসাবে জেলায় দৈনিক একজনের অপমৃত্যু ঘটছে। আত্মহননকারীদের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া এই তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী ও পুরুষ।
‘গতকাল শনিবার সাতক্ষীরায় তিনটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আত্মহননকারী তিনজনই বিভিন্ন কলেজের ছাত্রী। দেখা গেছে, তুচ্ছ কারণে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক কারণে হতাশা ও বিষণ্ণতায় ভোগে। তারা এর প্রতিবাদ অথবা প্রতিশোধ হিসেবে আত্মহত্যার মতো ক্ষতিকর পদক্ষেপ নেয়।’
লিখিত বক্তব্যে সুভাষ চৌধুরী বলেন, আত্মহত্যা কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিশোধের পথ হতে পারে না। শিশুকিশোরদের এ ধরনের প্রবণতা থেকে সরিয়ে আনতে হলে সামাজিক উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এত আত্মহত্যার ঘটনা কেন ঘটছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। অভিভাবকের আচরণ, শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, লিঙ্গ বৈষম্য, সামাজিক অবক্ষয় নাকি অন্য কিছু তা তলিয়ে দেখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলা হয়, এর থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে।
আমাদের শিশুরা নানা কারণে বিষণ্ণতা ও আশাহীনতায় ভোগে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, শিশুকিশোররা মাদকের দিকে ঝুঁকছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সুভাষ চৌধুরী আরো বলেন, শিশুর মেধা বিকাশের স্বাভাবিক সুযোগ দিতে হবে। চাপ প্রয়োগ করে তার কাছ থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। এমন সাতটি প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পাঠ্যপুস্তকে আত্মহত্যা বিষয়ক প্রবন্ধ লেখা, কাউন্সেলিং, গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের মতো বিষয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন আত্মহত্যায় ছেলেহারা বাবা তালা-কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ প্রমুখ। এ সময় আরো দুই মনোবিজ্ঞানী আবদুল আওয়াল মিয়া ও সালমা আক্তারসহ সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।