মনোনয়ন দ্বন্দ্ব, সাতক্ষীরায় সম্ভাব্য ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছুরিকাহত

দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন সাতক্ষীরা তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সরদার মসিয়ার রহমান। তিনি বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তালা উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার কথা তাঁর।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের রেড ক্রিসেন্ট অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মসিয়ার তালা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। তিনি খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার প্রতিনিধি।
আহত মসিয়ার রহমানের বরাত দিয়ে তাঁর স্বজনরা দাবি করছেন, গত ২৬ জানুয়ারি তালায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে অপমানের ঘটনার জেরে প্রতিশোধ নিতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেদিনের ঘটনার পর থেকে সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বিরাজ করছে।
মসিয়ার রহমানের ভাই তালা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন বলেন, ‘মসিয়ার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিমুল রাতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাড়ি ফেরার পথে রেড ক্রিসেন্ট অফিসের সামনে আসেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদের ঘনিষ্ঠজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদ পারভেজ ও তানভির কবির রবিন নামের দুই পরিচিত যুবক তাদের চা খেতে ডাকেন। সেখানে পৌঁছার পর পারভেজের ইশারায় রবিন মসিয়ারের কোমরে পেছনের অংশে সজোরে ধারালো ছুরি বসিয়ে দেয়। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ ও তালার সম্ভাব্য ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল জব্বার সরদার। তারা তাঁকে দ্রুত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।’
গত শনিবার তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলের হাইকমান্ডের কাছে নাম পাঠানোর জন্য প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটাভুটি প্রশ্নে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ ভোট গ্রহণ করা হবে না জানিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করতে উদ্যত হন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ভোটগ্রহণ পক্ষের সদস্যরা মুনসুর আহমেদ ও তাঁর সঙ্গে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলামকে চার ঘণ্টা সড়কে গাড়ির মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখেন। নেতাকর্মীরা মুনসুর আহমেদের গায়ে হাত তুলতেও উদ্যত হন। সেদিন ভোটাভুটি পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা নেন সরদার মসিয়ার রহমান ও তাঁর সমর্থকরা। এতে চরম ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হন মুনসুর আহমেদ। পরের দিনও ভাইসচেয়ারম্যান পদের প্রার্থীর নাম বাছাইয়ে সৃষ্ট হট্টগোলে সংঘর্ষ হয় এবং এতে আহত হন অন্তত ৩০ জন। সেদিনও ভূমিকা নেন মসিয়ার রহমান।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনার সময় উপস্থিত তালা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম জানান, হত্যাচেষ্টার নেপথ্য কারণ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘তালায় চেয়ারম্যান পদ নিয়ে প্রথম দিন জেলা সভাপতিকে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো ঝামেলা হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত কার নাম এক নম্বরে থাকবে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ইকতিয়ার উদ্দিন না কি মসিয়ার রহমানের তা নিয়ে সংঘর্ষে আহত হন ৩০ জন। এ সংঘর্ষে মসিয়ার রহমান জড়িত ছিলেন।’
তালা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার জাকির জানান, তালার দুই দিনের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সাতক্ষীরায় তার ভাই মসিয়ার রহমানকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এ ব্যপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি ঘটনা সম্পর্কে জেনেছেন। এখনো মামলা হয়নি।