ছেলের চিকিৎসা হবে, খুশিতে কাঁদলেন পেয়ারা বেগম
এনটিভি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ইউসুফের চিকিৎসার পুরো দায়িত্ব নিলেন এক হৃদয়বান ব্যক্তি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউসুফের খোঁজ-খবর নেন। তার অসহায় মা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা বাবদ তিন লাখ টাকা নগদ দেন। সেই সঙ্গে আগামী দিনের চিকিৎসারও পুরো খরচ তিনি বহন করবেন বলে ইউসুফের পরিবারকে আশ্বস্ত করেন। এ সংবাদ শোনার পর আনন্দে কান্না থামাতে পারেননি ইউসুফের মা পেয়ারা বেগম।
গতকাল বুধবার এনটিভি অনলাইনে ‘ইউসুফ বাঁচতে চায়, প্রয়োজন তিন লাখ টাকা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় মারাত্মক আঘাত পায় ইউসুফ। গত এক মাস ধরে ইউসুফ রাজধানীর কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শীর্ণকায় দেহটি নিয়ে পড়ে আছে ১৫ বছরের ইউছুফ। নিজ শক্তিতে হাত-পা নাড়তে পারে না। ডাকলে চোখ খুলে একটু তাকায়। আবার সেই আগের মতোই আধমরা অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে। পাশেই বসে ছেলেকে সুস্থ করে তোলার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে চলেছেন মা পিয়ারা বেগম।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের দিগৈ-ছয়ছিলা গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর আনিসুর রহমানের একমাত্র ছেলে ইউসুফ। নিজের ভিটেমাটি বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর বুকভরা আশা নিয়ে আনিছুর বছর তিনেক আগে বিদেশে যান। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় মালিক তাঁকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন। সেই দিন থেকেই মেধাবী ছাত্র ইউসুফ পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় বাজারে লেদ মেশিনের হেলপার হিসেবে কাজে লেগে যায়। সামান্য রোজগার দিয়েই বাবার চিকিৎসা ও সংসারের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করছিল ইউসুফ। সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হলে ইউসুফকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
নিজের নাম ও পরিচয় গোপন রেখে সাহায্যকারী প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘আমি এনটিভি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। তারা একটি অসহায় পরিবারকে নিয়ে একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমাদের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছে। একটি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি নিজেও গর্বিত।’
সাহায্য ও চিকিৎসার আশ্বাস পেয়ে ইউসুফের মা পেয়ারা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এনটিভি অনলাইনের কাছে আমরা চির ঋণী। এ ঋণ আমরা কোনোভাবে শোধ করতে পারব না। আশা করি এনটিভি অনলাইন এ সেবামূলক কাজ অব্যাহত রাখবে।’
সাহায্যকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পেয়ারা বেগম বলেন, ‘একমাত্র ছেলের চিকিৎসা হচ্ছে- এ জন্য আমরা মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জানাই। গতকালও ভাবতে পারিনি আমার ছেলের চিকিৎসা হবে। চোখের সামনে বুকের ধন একমাত্র ছেলে ধুকে ধুকে মরছে মা হিসেবে কিছুই করতে পারছি না, এরচেয়ে আক্ষেপের আর কিছুই নেই। ওর বাবাও অসুস্থ। ঘরভিটি ছাড়া বাড়িতে আর কিছুই নেই। এই অবস্থায় আজ ছেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার তিনি নিয়েছেন। এর চেয়ে আমার জীবনে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না।’